দ্বিতীয় অধ্যায়
প্রথম পাঠ—বিশুদ্ধি

রচনার চারিটি গুণ বিশেষ করিয়া শিখিতে হইবে। এই চারিটির নাম (১) বিশুদ্ধি, (২) অর্থব্যক্তি, (৩) প্রাঞ্জলতা, (৪) অলঙ্কার।

প্রথমে বিশুদ্ধি। রচনার ভাষা শুদ্ধ না হইলে সব নষ্ট হইল। বিশুদ্ধির প্রতি সর্বাগ্রে মনোযোগ করিতে হইবে। বিশুদ্ধি সর্বপ্রধান গুণ।

যাহা বিশুদ্ধ নহে, তাহা অশুদ্ধ। কি হইলে রচনা অশুদ্ধ হয়, তাহা বুঝিলেই, বিশুদ্ধি কি তাহা বুঝিবে।

পূর্বেই বলিয়াছি যে মৌখিক রচনা যেরূপ, লিখিত রচনাও সেইরূপ ; তবে কিছু প্রভেদ আছে। লিখিত রচনা কতকগুলি নিয়মের অধীন, মৌখিক রচনা সে সব নিয়মের অধীন নয়। অথবা অধীন হইলেও মৌখিক রচনায় সে সকল নিয়ম লঙ্ঘনে দোষ ধরা যায় না। লিখিত রচনায় যে সকল নিয়ম লঙ্ঘিত হইলে দোষ ধরিতে হয়, সেই সকল নিয়ম লঙ্ঘিত হইলেই রচনা অশুদ্ধ হইল। সেই সকল দোষের কথা এখন লিখিতেছি।

১। বর্ণাশুদ্ধি। মুখে সকলেই বলে, “পষ্ট” “মেগ” “শপত” “শট” “বাঁদ” “দুবল” “নেত্য” কিন্তু লিখিতে হইবে “স্পষ্ট, মেঘ, শপথ, শঠ, বাঁধ, দুর্বল, নৃত্য।”

২। সংক্ষিপ্তি। মুখে বলি, “কোরে, “কচ্চি”, “কর্‌ব” “কল্লুম” “কচ্ছিলুম” কিন্তু লিখিতে হইবে “করিয়া” “করিতেছি” “করিব” “করিলাম” “করিতেছিলাম” ইত্যাদি।

৩। প্রাদেশিকতা। বাঙ্গালার কোন প্রদেশের লোকে বলে, “কল্লুম”, কোন প্রদেশে, “কল্লেম”, কোথাও, “কল্লাম”, কোথাও “কন্নু”। কোন প্রদেশবিশেষেরই ভাষা ব্যবহার করা হইবে না ;—যাহা লিখিত ভাষায় চিরপ্রচলিত, তাহাই ব্যবহৃত হইবে।

অন্যান্য স্থানের অপেক্ষা রাজধানীর ভাষাই সমধিক পরিচিত। অতএব রাজধানীর ভদ্রসমাজে যে ভাষা চলিত তাহা লিখিত রচনায় ব্যবহৃত হইতে পারে। কোন দেশে বলে “ছড়ি” কোন দেশে বলে “নড়ি।” “ছড়ি” কলিকাতার ভদ্রসমাজে চলিত। উহা ব্যবহৃত হইতে পারে। “লগি” “লগা” “চৈড়”—ইহার মধ্যে লগিই কলিকাতায় চলিত, উহাই ব্যবহৃত হইতে পারে। অপর দুইটি ব্যবহৃত হইতে পারে না।

৪। গ্রাম্যতা। কেবল ইতর লোক বা গ্রাম্য লোকের মধ্যে যে সকল শব্দ প্রচলিত, তাহা ব্যবহৃত হইতে পারে না। “কৌশল্যার পো রাম,” “দশরথের বেটা লক্ষ্মণ,” এ সকল বাক্য গ্রাম্যতা-দোষে দুষ্ট।

নাটক ও উপন্যাস গ্রন্থে, যে স্থানে কথোপকথন লিখিত হইতেছে, সেখানে এই চারিটি দোষ অর্থাৎ বর্ণাশুদ্ধি সংক্ষিপ্ত প্রাদেশিকতা ও গ্রাম্যতা থাকিলে দোষ ধরা যায় না। কেন না মৌখিক রচনা এ সকল নিয়মের অধীন নহে বলিয়াছি। কথোপকথন মৌখিক রচনা মাত্র। কবিতা রচনাতেও অনেক স্থানে এ সকল নিয়মের ব্যতিক্রম দেখা যায়।

৫। ব্যাকরণ-দোষ। রচনায় ব্যাকরণের সকল নিয়মগুলি বজায় রাখিতে হইবে। ব্যাকরণের সকল নিয়মগুলি এখানে লেখা যাইতে পারে না—তাহা হইলে এইখানে একখানি ব্যাকরণের গ্রন্থ লিখিত হয়। কিন্তু উদাহরণস্বরূপ দুই একটা সাধারণ নিয়ম বুঝাইয়া দেওয়া যাইতেছে।