রবীন্দ্ররচনাবলী অনলাইনে প্রকাশ করবার সময় বা তার পরবর্তী সময়েও দেখা গেছে মানুষের উৎসাহের জোয়ার। বাঙালি তাঁদের প্রিয় সাহিত্যিকদের লেখা পেতে চান অনলাইনে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগ প্রতিষ্ঠিত ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদ সেই রুচির আবহ বজায় রেখে চলছে তার কাজের বৃত্তে। শুরু রবীন্দ্রনাথ দিয়ে। পরে একে একে কিংবদন্তী আরও অনেক সাহিত্যিকের রচনা ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদের তত্ত্বাবধানে উঠে আসবে এই নতুন তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে, নতুন পরিসরে। এবারে যেমন বঙ্কিমচন্দ্র।
ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদের এবারের প্রয়াস- সমগ্র বঙ্কিম রচনাবলী পাঠকের কাছে অনলাইনে পৌঁছে দেওয়া। এই প্রকল্পে সাহিত্য সংসদ,কলকাতা কর্তৃক প্রকাশিত বঙ্কিম রচনাবলীর প্রকাশন-বিন্যাস অনুসরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস, প্রবন্ধ, এমনকি তাঁর অন্যান্য রচনা, ঠিক যেমন ভাবে সাহিত্য সংসদের বইয়ে বিন্যস্ত আছে আমরাও ঠিক সেই পারম্পর্য আমাদের ওয়েবসাইটে বজায় রাখার চেষ্টা করেছি। এখন থেকে বাংলাভাষার পাঠক ইউনিকোড সম্মত পথে পেয়ে যাবেন বঙ্কিমচন্দ্রের প্রকাশিত সমস্ত লেখার অনলাইন উপস্থিতি। এই ওয়েবসাইটে আরও থাকবে অনুসন্ধানের সুযোগ এবং অন্বেষণের মাধ্যমে বঙ্কিমচন্দ্রের রচনা-সম্বন্ধীয় উপযোগী তথ্য; যেমন রচনার স্থান, কাল, ইত্যাদি খুঁজে দেখার সুযোগ, ঠিক রবীন্দ্র-রচনাবলীর মতই।
বঙ্কিমচন্দ্রের সমস্ত রচনা ইউনিকোড সম্মত উপায়ে সংকলিত করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে আই আই টি খড়্গপুর এবং ভাষা-প্রযুক্তি গবেষণা পরিষদের যৌথ কাজের মধ্যে দিয়ে। এ ছাড়াও অনেক কর্মীর প্রচ্ছন্ন সহযোগিতা রয়েছে এই কাজের পেছনে। তাঁরা সকলেই ধন্যবাদার্হ। ভবিষ্যতে বঙ্কিমের রচিত গানগুলির স্বরলিপি (অন্তত; যতগুলি পাওয়া যায়), এবং তাঁর রচনা সম্বন্ধীয় আরও বিশদ তথ্যে সমগ্র প্রকল্পটি আরও সমৃদ্ধ হবে। এমনকি অনুসন্ধানের ফলে যদি জানা যায় যে তাঁর কোনও রচনা অপ্রকাশিত রয়ে গেছে সেগুলোও সঠিক আইনি রাস্তায় পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে, এ বাসনা অগ্রিম।
এই কার্যক্রমে যথারীতি থাকছে পাঠকের নিজস্ব প্রস্তাব, সংশোধন, সুপারিশ ইত্যাদি যোগ করারও একটি অপশন, যার সাহায্যে পরিষদের ঐ বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা নিজেদের কাজের ভুলত্রুটি বুঝে নিয়ে ঐ উপস্থাপনকে আরও নির্ভুল ও যথাযথ করে তুলতে পারবে।
নতুন বিশ্বে নতুন প্রথায় নতুন রুচির পরিসরে বাংলা সাহিত্য সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়া একটা নাগরিক দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। শুধু তাই নয়, প্রাচীন সাহিত্য পাঠের মধ্যে দিয়ে মানুষেরও সুযোগ ঘটে কালানুক্রমিক রুচিবোধ ও সংস্কৃতির সম্পর্ক যাচাই করে দেখার। সেই সঙ্গে সমাজ, সংস্কৃতি, মানবিক বোধ, রাজনীতি, সাহিত্য, সমস্ত কিছু নিয়ে মহান চিন্তাবিদ, রচয়িতাদের বক্তব্য সম্পর্কে মানুষের বর্তমান সংস্কারের আদান-প্রদান ঘটাও জরুরি। আর সব কিছু বাদ রাখলেও কালজয়ী, কলোত্তীর্ণ সাহিত্যের স্বাদ যুগে যুগে রসিক পাঠকের কাছে তো সব সময়ই আদরের।