পা। শুনিয়া আমাকে ছাড়িয়া দিবে বল?

আ। সে পরের কথা। আগে শুনি।

পা। আমি পাখী নই। আমি পশু। বহুকাল পূর্ব্বে কৃষ্ণসাগরের নিকট আমার বাস ছিল। তখন আমি শূকর ছিলাম। পাঁক ঘাঁটিতাম, পাঁক মাখিতাম, পাঁক খাইতাম। ক্রমে সেখানে মনুষ্যনামা এক প্রকার দ্বিপদবিশিষ্ট হিংস্রক জন্তু দেখা দিল। এবং পাঁকাল মাছ মনে করিয়া আমাদিগকে ধরিয়া খাইতে লাগিল।

আ। শূকরকে পাঁকাল মাছ মনে করিল কেমন করে?

পা। শূকরও পাঁক ঘাঁটে, পাঁকাল মাছও পাঁক ঘাঁটে। অতএব শূকর এবং পাঁকাল মাছ এক।

আমার Whately’s Logic জানা ছিল, ফস্ করে বলিলাম –ওটা যে fallacy of undistributed middle হল।

পা। Tut, fal-la-cy of un-dis-tri-bu-ted mid-dle! ও ত logic-এর কথা। Antiquities-এর সহিত logic-এর সম্পর্ক কি? দিন কতক Antiquities চর্চ্চা কর, Webber সাহেবের গ্রন্থ পড়, তাহা হইলে আর কিছু আটকাবে না, ও রকম খট্‌কা হবে না। দ্বিপদগণের তাড়নায় আমরা পলাইতে লাগিলাম। যত পলাই ততই শীত, আর ততই আমাদের গায়ে বড় বড় লোম দেখা দিতে লাগিল। Plateetud; Plateetud।

আ। সেটা কি রকম করিয়া হইল?

পা। দেখ, কথায় কথায় ছল ধরিলে পুরাতত্ত্ব শেখা যায় না। শিবের কপালে চোক হইল কেমন করিয়া? গণেশের ঘাড়ে হাতীর মুণ্ডু হইল কেমন করিয়া? হিমালয় পর্ব্বতটা দুর্গার বাপ হইল কেমন করিয়া? কুমারী মেরীর গর্ভে যীশুখ্রীষ্টের জন্ম হইল কেমন করিয়া? এসব পুরাণের কথা, কে না বিশ্বাস করে? তবে পুরাতত্ত্বের বেলা এত খট্‌কা কেন? পুরাণ আর পুরাতত্ত্ব একই জিনিষ। উভয়েই পুরা কবিত্বময়। একত্বের কি চমৎকার প্রমাণ দেখ দেখি! তবে দুইটি শব্দের শেষ ভাগে যে একটা প্রভেদ দেখিতে পাও, সে কেবল প্রত্যয় ভেদে ঘটিয়াছে।

আ। তুমি সে সংস্কৃত ব্যাকরণও জান দেখিতেছি।

পা। আমি জানিব না ত কি তুমি জানিবে? সংস্কৃত ব্যাকরণ আমাদের পশ্চিমাঞ্চল হইতে ভারতবর্ষে আসিয়াছে, তা জান? আমি নিশ্চয় করিয়া বলিতে পারিতেছি না, বই কাছে নাই, কিন্তু আমার বোধ হয় Webber সাহেবের গ্রন্থে একথারও প্রমাণ পাওয়া যাইতে পারে।

আ। কোবিদবর! বলিয়া যান্!

পা। পলাইতে পলাইতে শেষে আমরা সমুদ্রমধ্যস্থিত একটি গিরিগুহায় ঢুকিয়া রক্ষা পাইলাম। সেখানে খুব শীত। সেই শীতে আমাদের ভূঁড়ো পেট কুঁক্‌ড়ে গেল –আমরা সিংহ হইয়া গেলাম। এই দেখ সেই সিংহের কেশর আমার ঘাড়ে উচ্চ ঝোটন আকারে বিরাজমান।

আ। আবার সেই রকম fallacy হল না?

পা। দেখ, এই মাত্র তোমাকে বুঝাইয়া দিলাম, এ সকল পুরাতত্ত্ব, ইহাতে fallacy কোন ক্রমেই হইতে পারে না, তুমি সে সব কথা ইহারই মধ্যে ভুলিয়া গিয়াছ? তোমাকে আর শুনাইয়া কি করিব, আমি ক্ষান্ত হইলাম।

আ। দেখ, তুমি রাগ করিও না, আমি একটু একটু আফিঙ্গ খাই বলিয়া সকল সময় আমার সব কথা মনে থাকে না।

পা। ওঃ! তুমি আফিঙ্গ খাও। তবে ত আমি তোমার একজন পরম সুহৃৎ, প্রধান শুভানুধ্যায়ী। আমি নিজে আফিঙ্গ খাই না বটে, আফিঙ্গ খেলে আমার পেট ফাঁপে, কিন্তু আফিঙ্গখোর মাত্রই আমার স্নেহের বস্তু, আমার পোষ্যপুত্র বলিলেও হয়। তবে শুন।