যখন সিংহ ছিলাম তখন মধ্যে মধ্যে গুহা হইতে নিষ্ক্রান্ত হইয়া নিকটস্থ একটা দেশে আহার সংগ্রহ করিতে যাইতাম। কিন্তু শীঘ্রই সে দিকে কাঁটা পড়িল। একটা ভূতের মেয়ে এক দিন এমনি আমাদের লেজ মুচড়াইয়া দিয়াছিল যে, লেজগুলা একেবারে চেপটা হইয়া গেল, আর সে দিকে যাইতে সাহস হইল না। কাজেই পেটের জ্বালায় আপনাপনি খাইতে আরম্ভ করিলাম। বোধ হয় এই রকম করিয়া সমস্ত সিংহকুল নিঃশেষিত হইয়া যাইত। কিন্তু “ভাগ্যবানের বোঝা ভগবান্ বয়।” ভাগ্যবলে আমাদের গায় পালক দেখা দিল। আমরা সাদা সাদা ডানা বিস্তার করিয়া সমুদ্র পার হইয়া এ দেশে ওদেশে যাইতে আরম্ভ করিলাম। যেখানে উত্তম আহারের সম্ভাবনা দেখিলাম, সেইখানে বাসা নির্ম্মাণ করিতে আরম্ভ করিলাম। যে প্রতিবাদী হইল, তাহাকে মারিয়া ফেলিলাম, অথবা তাড়াইয়া দিলাম। Plateetud; Plateetud।

আ। এদেশেও কি বাসা নির্ম্মাণ করিয়াছ?

পা। করিয়াছি, কিন্তু পাকা পোক্ত রকম নয়।

আ। নয় কেন?

পা। এখানে এত বেশী খাই যে, শীঘ্র উদরাময় জন্মিয়া যায়, বাড়ীতে না গেলে সারে না। আর গুহার ভিতর সঞ্চিত আহার লুকাইবার সুবিধাও খুব।

আ। আচ্ছা, তোমার দুইটি বই পা দেখিতেছি না। আর দুইটি পা কি হইল?

পা। সে বড় দুঃখের কথা, কাহাকেও বলিও না। সংক্ষেপে বলি – ইচ্ছানন্দপুর নামক স্থানে একটা দ্বিপদবিশিষ্ট জন্তুর বাসায় আহারের লোভে প্রবেশ করিয়াছিলাম। জন্তুটা আমাকে ধরিয়া আমার একটা পা কাটিয়া দিল। এবং মহানন্দপুর নামক আর এক স্থানে ঐরূপ কারণে আর একটা পা কাটা গিয়াছে! অতএব আমি পক্ষিরূপে একটি পশু। Plateetud, Plateetud।

এই সময় প্রসন্ন গোয়ালিনী সেখানে না থাকায় আমার বড়ই আপ্‌শোস্ হইল। থাকিলে শুনাইয়া দিতাম, পরের ঘরে লুকোচুরি খেলা কি রকম লাভের কাজ। পরে পাখীটাকে জিজ্ঞাসা করিলাম –তুমি কি ও Plateetud, Plateetud কর?

পা। এদেশে আসা অবধি আমি Plateetud বলিতে বড় ভালবাসি।

আ। কথাটার কোন অর্থ আছে কি?

পা। আছে বৈ কি। কথাটা plaintain শব্দ হইতে উৎপন্ন।

আ। বুঝিয়াছি, তুমি plantain খাইতে ভালবাস বলিয়া সর্ব্বদা Plateetud, Plateetud কর।

পা। তা নয়; আমি এদেশের যথাসর্ব্বস্ব লুঠিয়া খাইতেছি। কাজেই আপ্‌শোস্ দেশের দ্বিপদবিশিষ্ট জন্তুগুলার ভাগ্যে plantain বই আর কিছুই থাকে না। তাহাদিগের edification-এর জন্য Plateetud বলি। বুঝ্‌লে?

আ। আহা তুমি কি পরোপকারী!

পা। তার প্রমাণ ঐ নীচে দেখ।

দেখিলাম ডাঁড়ের নীচে, মেজের উপর পিপীলিকার ন্যায় অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জন্তু কিল্ কিল্ করিয়া বেড়াইতেছে। পাখীকে জিজ্ঞাসা করিলাম–ও সব ত পিপীলিকা দেখিতেছি। ওখানে তোমার পরোপকারিত্বের প্রমাণ কই?

পা। উহারা পিপীলিকার ন্যায় ক্ষুদ্র বটে, দেখিতেও প্রায় পিপীলিকা, কিন্তু উহারা পিপীলিকা নয়। উহাদিগকে বঙ্গজ বলে। ঐ দেখ আমার ডাঁড় থেকে এক ফোঁটা দুধ পড়িল আর বঙ্গজগুলা কিল্ কিল্ করিয়া মারামারি ঠেলাঠেলি করিয়া ঐ দুধটুকু খাইতে আসিল। আমার ডাঁড় হইতে যে দুই এক ফোঁটা দুধ পড়ে তাই খাইয়া উহারা জীবনধারণ করে। আমি উহাদের উপকারক নই?

আ। শুধু উপকারক? যখন তুমি উহাদের উদর চালাইতেছ, তখন তুমি উহাদের প্রাণপুরুষ, জীবাত্মা, পরমাত্মা, প্রেতাত্মা, হর্ত্তা, কর্ত্তা, বিধাতা, সবই, কেন না উহারা উদরময় উদরসর্ব্বস্ব। আচ্ছা, উহাদের মধ্যে ঐ যে কতকগুলার বড় বড় মাথা দেখিতেছি উহারা কে? উহাদের মাথা অত বড় কেন?