ভ। বার বার সে সংবাদ কেন জিজ্ঞাসা কর? তিনি ত তোমার পক্ষে মৃত।

ক। আমি তাঁর পক্ষে মৃত, তিনি আমার পক্ষে নন।

ভ। তিনি তোমার পক্ষে মৃতবৎ হইবেন বলিয়াই ত তুমি মরিলে। বার বার সে কথা কেন কল্যাণী?

ক। মরিলে কি সম্বন্ধ যায়? তিনি কেমন আছেন?

ভ। ভাল আছেন।

ক। কোথায় আছেন? পদচিহ্নে?

ভ। সেইখানেই আছেন।

ক। কি কাজ করিতেছেন?

ভ। যাহা করিতেছিলেন। দুর্গনির্মাণ, অস্ত্রনির্মাণ। তাঁহারই নির্মিত অস্ত্রে সহস্র সহস্র সন্তান সজ্জিত হইয়াছে। তাঁহার কল্যাণে কামান, বন্দুক, গোলা, গুলি, বারুদের আমাদের আর অভাব নাই। সন্তানমধ্যে তিনিই শ্রেষ্ঠ। তিনি আমাদিগকে মহৎ উপকার করিতেছেন। তিনি আমাদিগের দক্ষিণ বাহু।

ক। আমি প্রাণত্যাগ না করিলে কি এত হইত? যার বুকে কাদাপোরা কলসী বাঁধা, সে কি ভবসমুদ্রে সাঁতার দিতে পারে? যার পায়ে লোহার শিকল, সে কি দৌড়ায়? কেন সন্ন্যাসী, তুমি এ ছার জীবন রাখিয়াছিলে?

ভ। স্ত্রী সহধর্মিণী, ধর্মের সহায়।

ক। ছোট ছোট ধর্মে। বড় বড় ধর্মে কণ্টক। আমি বিষকণ্টকের দ্বারা তাঁহার অধর্মকণ্টক উদ্ধৃত করিয়াছিলাম। ছি! দুরাচার পামর ব্রহ্মচারী! এ প্রাণ তুমি ফিরিয়া দিলে কেন?

ভ। ভাল, যা দিয়াছি, তা না হয় আমারই আছে। কল্যাণী! যে প্রাণ তোমায় দিয়াছি, তাহা কি তুমি আমায় দিতে পার?

ক। আপনি কিছু সংবাদ রাখেন কি, আমার সুকুমারী কেমন আছে?

ভ। অনেক দিন সে সংবাদ পাই নাই। জীবানন্দ অনেক দিন সে দিকে যান নাই।

ক। সে সংবাদ কি আমায় আনাইয়া দিতে পারেন? স্বামীই আমার ত্যাজ্য, বাঁচিলাম ত কন্যা কেন ত্যাগ করিব? এখনও সুকুমারীকে পাইলে এ জীবনে কিছু সুখ সম্ভাবিত হয়। কিন্তু আমার জন্য আপনি কেন এত করিবেন?

ভ। করিব কল্যাণী। তোমার কন্যা আনিয়া দিব। কিন্তু তার পর?

ক। তার পর কি ঠাকুর?

ভ। স্বামী?

ক। ইচ্ছাপূর্বক ত্যাগ করিয়াছি।

ভ। যদি তার ব্রত সম্পূর্ণ হয়?

ক। তবে তাঁরই হইব। আমি যে বাঁচিয়া আছি, তিনি কি জানেন?

ভ। না।

ক। আপনার সঙ্গে কি তাঁহার সাক্ষাৎ হয় না?

ভ। হয়।

ক। আমার কথা কিছু বলেন না?

ভ। না, যে স্ত্রী মরিয়া গিয়াছে, তাহার সঙ্গে স্বামীর আর সম্বন্ধ কি?

ক। কি বলিতেছেন?