তৃতীয় পরিচ্ছেদ

শান্তি সাহেবকে ত্যাগ করিয়া হরিণীর ন্যায় ক্ষিপ্রচরণে বনমধ্যে কোথায় প্রবিষ্ট হইল। সাহেব কিছু পরে শুনিতে পাইলেন, স্ত্রীকণ্ঠে গীত হইতেছে,-

এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে?

হরে মুরারে! হরে মুরারে!

আবার কোথায় সারঙ্গের মধুর নিক্কণে বাজিল তাই;-

এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে?

হরে মুরারে‌! হরে মুরারে!

তাহার সঙ্গে পুরুষকণ্ঠ মিলিয়া গীত হইল–

এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে?

হরে মুরারে! হরে মুরারে!

 

তিন স্বরে এক হইয়া গানে বনের লতাসকল কাঁপাইয়া তুলিল। শান্তি গাইতে গাইতে চলিল,-

“এ যৌবন-জলতরঙ্গ রোধিবে কে?

হরে মুরারে! হরে মুরারে!

জলেতে তুফান হয়েছে,

আমার নূতন তরী ভাস‍ল সুখে,

মাঝিতে হাল ধরেছে,

হরে মুরারে! Hore মুরারে!

ভেঙ্গে বালির বাঁধ, পুরাই মনের সাধ,

জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটেছে রাখিবে কে?

হরে মুরারে! হরে মুরারে!

 

সারঙ্গেও ঐ বাজিতেছিল,-

জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটেছে রাখিবে কে?

হরে মুরারে! হরে মুরারে!

 

যেখানে অতি নিবিড় বন, ভিতরে কি আছে, বাহির হইতে একেবারে অদৃশ্য, শান্তি তাহারই মধ্যে প্রবেশ করিল। সেইখানে সেই শাখাপল্লবরাশির মধ্যে লুক্কায়িত একটি ক্ষুদ্র কুটীর আছে। ডালের বাঁধন, পাতার ছাওয়া, কাটের মেজে, তার উপর মাটি ঢালা। তাহারই ভিতরে লতাদ্বার মোচন করিয়া শান্তি প্রবেশ করিল। সেখানে জীবানন্দ বসিয়া সারঙ্গ বাজাইতেছিলেন।

জীবানন্দ শান্তিকে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “এতদিনের পর জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটেছে কি?”

শান্তিও হাসিয়া উত্তর করিল, “নালা ডোবায় কি জোয়ার গাঙ্গে জল ছুটে?”