ভবানন্দ ভাবিতে ভাবিতে মঠে চলিলেন। যাইতে যাইতে রাত্রি হইল। পথে একাকী যাইতেছিলেন। বনমধ্যে একাকী প্রবেশ করিলেন। দেখিলেন, বনমধ্যে আর এক ব্যক্তি তাঁহার আগে আগে যাইতেছে। ভবানন্দ জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে হে যাও?”

অগ্রগামী ব্যক্তি বলিল, “জিজ্ঞাসা করিতে জানিলে উত্তর দিই–আমি পথিক |”

ভ। বন্দে।

অগ্রগামী ব্যক্তি বলিল, “মাতরম্ |”

ভ। আমি ভবানন্দ গোস্বামী।

অগ্রগামী। আমি ধীরানন্দ।

ভ। ধীরানন্দ, কোথায় গিয়াছিলে?

ধী। আপনারই সন্ধানে।

ভ। কেন?

ধী। একটা কথা বলিতে।

ভ। কি কথা?

ধী। নির্জনে বক্তব্য।

ভ। এইখানেই বল না, এ অতি নির্জন স্থান।

ধী। আপনি নগরে গিয়াছিলেন?

ভ। হাঁ।

ধী। গৌরী দেবীর গৃহে?

ভ। তুমিও নগরে গিয়াছিলে নাকি?

ধী। সেইখানে একটি পরমাসুন্দরী যুবতী বাস করে?

ভবানন্দ কিছু বিস্মিত, কিছু ভীত হইলেন। বলিলেন, “এ সকল কি কথা?”

ধী। আপনি তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়াছিলেন।

ভ। তার পর?

ধী। আপনি সেই কামিনীর প্রতি অতিশয় অনুরক্ত।

ভ। (কিছু ভাবিয়া) ধীরানন্দ, কেন এত সন্ধান লইলে? দেখ ধীরানন্দ, তুমি যাহা বলিতেছ, তাহা সকলই সত্য। তুমি ভিন্ন আর কয় জন একথা জানে?

ধী। আর কেহ না।

ভ। তবে তোমাকে বধ করিলেই আমি কলঙ্ক হইতে মুক্ত হইতে পারি?

ধী। পার।

ভ। আইস, তবে এই বিজন স্থানে দুই জনে যুদ্ধ করি। হয় তোমাকে বধ করিয়া আমি নিষ্কণ্টক হই, নয় তুমি আমাকে বধ করিয়া আমার সকল জ্বালা নির্বাণ কর। অস্ত্র আছে?

ধী। আছে – শুধু হাতে কার সাধ্য তোমার সঙ্গে এ সকল কথা কয়। যুদ্ধই যদি তোমার মত হয়, তবে অবশ্য করিব। সন্তানে সন্তানে বিরোধ নিষিদ্ধ। কিন্তু আত্মরক্ষার জন্য কাহারও সঙ্গে বিরোধ নিষিদ্ধ নহে। কিন্তু যাহা বলিবার জন্য আমি তোমাকে খুঁজিতেছিলাম, তাহা সবটা শুনিয়া যুদ্ধ করিলে ভাল হয় না?