রাজসিংহ হাসিয়া বলিলেন, “এত দই-দুধ উদয়পুরে নাই। শুনিয়াছি, দিল্লীর মার্‍জরীদের পেট মোটা। কেবল উদিপুরীকে মহিষী চঞ্চলকুমারীর কাছে পাঠাইয়া দাও। তিনি ইহার জন্য আমাকে বিশেষ করিয়া বলিয়াছেন। আর সব ঔরঙ্গজেবের ধন ঔরঙ্গজেবকে ফিরাইয়া দাও |”

মাণিকলাল জোড়হাতে বলিল, “লুঠের সামগ্রী সৈনিকেরা কিছু কিছু পাইয়া থাকে |”

রাজসিংহ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তোমার কাহাকেও প্রয়োজন থাকে, গ্রহণ করিতে পার। কিন্তু মুসলমানী, হিন্দুর অস্পর্‍ষীয়া |”

মা। উহারা নাচিতে গায়িতে জানে।

রা। নাচ-গানে মন দিলে, রাজপুত কি আর তোমাদিগের মত বীরপনা দেখাইতে পারিবে? সব ছাড়িয়া দাও। উদিপুরীকে কেবল উদয়পুরে পাঠাইয়া দাও।

মা। এ সমুদ্রমধ্যে সে রত্ন কোথায় খুঁজিয়া পাইব? আমার ত চেনা নাই। যদি আজ্ঞা হয়, তবে হনূমানের মত, এ গন্ধমাদন লইয়া গিয়া মহিষীর কাছে উপস্থিত করি। তিনি বাছিয়া লইবেন। যাহাকে রাখিতে হয়, রাখিবেন, বাকিগুলা ছাড়িয়া দিবেন। তাহারা উদয়পুরের বাজারে সুর‍মা মিশি বেচিয়া দিনপাত করিবে।

এমন সময়ে মহাগজপৃষ্ঠ হইতে নির্‍মলকুমারী রাজসিংহ ও মাণিকলাল উভয়কে দেখিতে পাইল। করযুগল উত্তোলন করিয়া সে উভয়কে প্রণাম করিল। দেখিয়া রাজসিংহ মাণিকলালকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “ও আবার কোন্ বেগম? হিন্দু বোধ হইতেছে–সেলাম না করিয়া, আমাদের প্রণাম করিল |”

মাণিকলাল দেখিয়া উচ্চহাস্য করিলেন। বলিলেন, “মহারাজ! ও একটা বাঁদী-ওটা বেগম হইল কি প্রকারে? উহাকে ধরিয়া আনিতে হইবে |”

এই বলিয়া মাণিকলাল, হুকুম দিয়া, নির্‍মলকুমারীকে হাতীর উপর হইতে নামাইয়া আপনার নিকট আনাইল। নির্‍মল কথা না কহিয়া হাসিতে আরম্ভ করিল। মাণিকলাল জিজ্ঞাসা করিল, “এ আবার কি? তুমি বেগম হইলে কবে?”

নির্‍মল , মুখ-চোখ ঘুরাইয়া বলিল, “মেয়নে হজরৎ ইম‍‍‍লি বেগম। তস্‌‍‍লিম দে |”

মাণিকলাল। তা না হয় দিতেছি–বেগম ত তুমি নও জানি; তোমার বাপ-দাদাও কখনও বেগম হয় নাই–কিন্তু এ বেশ কেন?

নি । পহেলা মেরা হুকুম তামিল কর্–বাজে বাত আব্‍‍‍হি রাখ্।

মা। সীতারাম! বেগম সাহেবার ধমক দেখ!

নি। হামারি হুকুম যেহি হৈ কি হজরৎ উদিপুরী বেগম সাহেবা সাম্‌নেকো পঞ্জকলস্– দার হাওদাওয়ালে হাতিপর তশরিফ রাখতী হেঁই। উন‍‍কো হামারা হুজুর মে হাজির কর্।

বলিতে বিলম্ব সহিল না–মাণিকলাল তখনই উদিপুরীকে হাতী হইতে নামাইতে বলিল। উদিপুরী অবগুণ্ঠনে মুখ আবৃত করিয়া কাঁদিতে কাঁদিতে নামিল। মাণিকলাল একখানা দোলা খালি করিয়া, সে দোলা উদিপুরীর হাতীর কাছে পাঠাইয়া দিয়া, দোলায় চড়িয়া উদিপুরীকে লইয়া আসিল। তার পর মাণিকলাল, নির্‍মলকুমারীকে কাণে কাণে বলিল, “জী হাম‍লী বেগম সাহেবা ‌‌! আর একটা কথা__”

নি । চুপ রহ, বেতমিজ ! মেরে নাম হজ‍রৎ ইম‍‍লি বেগম।

মা। আচ্ছা, যে বেগমই হও না কেন, জেব-উন্নিসা বেগমকে চেন?

নি। জান‍তে নেহিন? বহ হামারি বেটী লাগ‍তী হৈ। দেখ, আগাড়ী সোনেকা তিন কলস যো হাওদে পর জলুষ দেতা হ্যায়, বস‍পর জেব-উন্নিসা বৈঠী হৈ।