রাজসিংহ
মাণিকলাল তাঁহাকেও হাতী হইতে নামাইতে দোলায় তুলিয়া লইয়া আসিলেন।
সেই সময়ে আবার কোন মহিষী হাওদার জরির পরদা টানিয়া মুখ বাহির করিয়া, নির্মলকুমারীকে ডাকিল।
মাণিকলাল নির্মল কে জিজ্ঞাসা করিল, “আবার তোমাকে কে ডাকিতেছে না?”
নির্মল কহিল, “হাঁ। যোধপুরী বেগম। কিন্তু উঁহাকে এখানে আনা হইবে না। আমাকে হাতীর উপর চড়াইয়া উঁহার কাছে লইয়া চল। শুনিয়া আসি |”
মাণিকলাল তাহাই করিল। নির্মলকুমারী যোধপুরীর হাতীর উপর উঠিয়া তাঁহার ইন্দ্রসনতুল্য হাওদার ভিতর প্রবেশ করিল। যোধপুরী বলিলেন, “আমাকে তোমাদের সঙ্গে লইয়া চল |”
নি। কেন মা?
যো। কেন, তা ত কতবার বলিয়াছি। আমি এ ম্লেচ্ছাপুরীতে, এ মহাপাপের ভিতর আর থাকিতে পারি না।
নি । তাহা হইবে না। তোমার যাওয়া হইবে না। আজ যদি মোগল সাম্রাজ্য টিকে, তবে তোমার ছেলে দিল্লীর বাদশাহ হইবে। আমরা সেই চেষ্টা করিব। তাঁর রাজত্বে আমরা সুখে থাকিব।
যোধপুরী। অমন কথা মুখে আনিও না, বাছা ! বাদশাহ শুনিলে, আমার ছেলে এক দিনও বাঁচিবে না। বিষপ্রয়োগে তাহার প্রাণ যাইবে।
নি । এখনকার কথা বলিতেছি না। যাহা শাহজাদের হক্, কালে তিনি পাইবেন। আপনি আমাকে আর কোন আজ্ঞা করিবেন না। আপনি যদি আমার সঙ্গে এখন যান, আপনার পুত্রের অনিষ্ট হইতে পারে।
যোধপুরী ভাবিয়া বলিল, “সে কথা সত্য। তোমার কথাই শুনিলাম। আমি যাইব না। তুমি যাও |”
নির্মলকুমারী তখন তাঁহাকে প্রণাম করিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন।
উদিপুরী এবং জেব-উন্নিসা উপযুক্ত সৈন্যে বেষ্টিতা হইয়া নির্মলকুমারীর সহিত উদয়পুরে চঞ্চলকুমারীর নিকট প্রেরিতা হইলেন।