দ। কাজ হইয়াছে–ঘর যাইব।

প্রতিহারী। টাকা পাইয়াছ–আমায় কিছু দিবে না?

দ। আমার টাকার বড় দরকার, একটা গীত শুনাইয়া যাই। সারেঙ্গ আন।

প্রতিহারীর সারেঙ্গ ছিল–মধ্যে মধ্যে বাজাইত। রঙমইহালে গীতবাদ্যের বড় ধুম। সকল বেগমের এক এক সম্প্রদায় নর্তরকী ছিল; যে অপরিণীতা গণিকাদিগের ছিল না, তাহারা আপনা আপনি সে কার্যস সম্পন্ন করিত। রঙম হালে রাত্রিতে সুর লাগিয়াই ছিল। দরিয়া তাতারীর সারেঙ্গ লইয়া গান করিতে বসিল। সে অতিশয় সুকণ্ঠ; সঙ্গীতে বড় পটু। অতি মধুর গায়িল। জেব-উন্নিসা ভিতর হইতে জিজ্ঞাসা করিল, “কে গায়?”

প্রতিহারী বলিল, “দরিয়া বিবি |”

হুকুম হইল, “উহাকে পাঠাইয়া দাও |”

দরিয়া আবার জেব-উন্নিসার নিকট গিয়া কুর্ণিশ করিল। জেব-উন্নিসা বলিলেন, “গা। ঐ বীণ আছে |”

বীণ লইয়া দরিয়া গায়িল। গায়িল অতি মধুর। শাহজাদী অনেক অপ্সরোনিন্দিত, সঙ্গীতবিদ্যাপটু, গায়ক-গায়িকার গান শুনিয়াচিলেন, কিন্তু এমন গান কখন শুনেন নাই। দরিয়ার গীত সমাপ্ত হইলে, জেব-উন্নিসা জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি মবারকের কাছে কখন গায়িয়াছিলে?”

দরিয়া। আমার এই গীত শুনিয়াই তিনি আমাকে বিবাহ করিয়াছিলেন।

জেব-উন্নিসা একটা ফুলের তোর‍‍রা ফেলিয়া দরিয়াকে এমন জোরে মারিলেন যে, দরিয়ার কর্ণভূষায় লাগিয়া, কাণ কাটিয়া রক্ত পড়িল। তখন জেব-উন্নিসা তাহাকে আরও কিছু অর্থ দিয়া বিদায় করিলেন। বলিলেন, “আর আসিস্ না |”

দরিয়া ত‍‍স্‍‍লীম দিয়া বিদায় হইল। মনে মনে বলিল, “আবার আসিব–আবার জ্বালাইব–আবার মার খাইব–আবার টাকা নিব। তোমার সর্বরনাশ করিব |”