জে। কুকুরটা এখন হাতে আছে–মানুষটা এখন হাতে নাই। এখন কুকুরটাই নে।

এই বলিয়া জেব-উন্নিসা আসবসেবনপ্রফুল্লচিত্তে যে ফুলে কুকুর গড়িয়াছিল, সেই ফুলগুলা দরিয়াকে ফেলিয়া দিতে লাগিলেন। দরিয়া তাহা কুড়াইয়া লইয়া ওড়নারয় তুলিল–নহিলে বেয়াদবি হইবে। তার পর সে বলিল, “আমি হুজুরের কৃপায় কুকুর মানুষ দুই পাইলাম |”

জে। কিসে?

দ। মানুষটা আমার।

জে। কিসে?

দ। আমার সঙ্গে সাদি হয়েছে।

জে। নেকাল হিঁয়াসে।

জেব-উন্নিসা কতকগুলা ফুল ফেলিয়া সবলে দরিয়াকে প্রহার করিল।

দরিয়া জোড়হাত করিয়া বলিল, “মোল্লা গোওয়া সব জীবিত আছে। না হয় তাহাদের জিজ্ঞাসা করিয়া পাঠান;”

জেব-উন্নিসা ভ্রূভঙ্গ করিয়া বলিল, “আমার হুকুমে তাহারা শূলে যাইবে |”

দরিয়া কাঁপিল। এই ব্যাঘ্রীতুল্যা মোগল-কুমারীরা সব পারে, তা সে জানিত। বলিল, “শাহজাদী! আমি দু:খী মানুষ, খবর বেচিতে আসিয়াছি–আমার সে সব কথার প্রয়োজন নাই |”

জে। কি খবর–বল্।

দ। দুইটা আছে। একটা এই মবারক খাঁ সম্বন্ধে। আজ্ঞা না পাইলে বলিতে সাহস হয় না।

জে। বল্।

রি। ইনি আজ রাত্রে চৌকে গণেশ জ্যোতিষীর কাছে আপনার কে‍স্মসৎ গণাইতে গিয়াছিলেন।

জে। জ্যোতিষী কি বলিল?

দ। শাহজাদী বিবাহ কর। তাহা হইলে তোমার তরক্কী হইবে।

জে। মিছা কথা। ম‍্াহ‍সবদার কখন্ জ্যোতিষীর কাছে গেল?

দ। এখানে আসিবার আগেই।

জে। কে এখানে আসিয়াছিল?

দরিয়া একটু ভয় খাইল। কিন্তু তখনই আবার সাহস করিয়া তস্লীযম দিয়া বলিল, “মবারক খাঁ সাহেব |”

জে। তুই কেমন করিয়া জানিলি?

দ। আমি আসিতে দেখিয়াছি।

জে। যে এ সকল কথা বলে, আমি তাহাকে শূলে দিই।

দরিয়া শিহরিল। বলিল, “বেগম সাহেবার হুজুরে ভিন্ন এ সকল কথা আমি মুখে আনি না |”

জে। আনিলে, জল্লাদের হাতে তোমার জিব কাটিয়া ফেলিব। তোর দোসরা খবর কি বল্ ?

দ। দো‍স্‍‍রা খবর রূপনগরের।

দরিয়া তখন চঞ্চলকুমারীর তসবির ভাঙ্গার কাহিনীটা আদ্যোপান্ত শুনাইল। শুনিয়া জেব-উন্নিসা বলিলেন, “এ খবর আচ্ছা। কিছু বখ‍‍শিশ পাইবি |”

তখন রঙমখহালের খাজনাখানার উপর বখশিশশের পরওয়ানা হইল। পাইয়া দরিয়া পলাইল।

তাতরী প্রতিহারী তাহাকে ধরিল। তরবারিখানা দরিয়ার কাঁধের উপর রাখিয়া বলিল, “পালাও কোথা সখি?”