রাজসিংহ
জনতার জন্য অশ্বারোহী অতি মন্দভাবে অশ্বচালনা করিতেছিলেন। যে যুবতী ইতস্তত: নিরীক্ষণ করিতেছিল, সে তাঁহাকে দেখিতে পাইল। দেখিয়াই, নিকটে আসিয়া ঘোড়ার লাগাম ধরিয়া থামাইল। বলিল, “খাঁ সাহেব–মবারক সাহেব–মবারক!”
মবারক–অশ্বারোহীর ঐ নাম–জিজ্ঞাসা করিল, “কে তুমি?”
যুবতী বলিল, “ইয়া আল্লা! আর কি চিনিতেও পার না?”
মবারক বলিল, “দরিয়া?”
দরিয়া বলিল, “জী |”
ম। তুমি এখানে কেন?
দ। কেন, আমি ত সকল জায়গায় যাই। তোমার ত নিষেধ নাই। তুমি বারণ কর কি?
ম। আমি কেন বারণ করিব? তুমি আমার কে?
তার পর মৃদুতর স্বরে মবারক বলিল, “কিছু চাই কি?”
দরিয়া কাণে আঙ্গুল দিয়া বলিল, “তোবা! তোমার টাকা আমার হারাম! আমরা আতর সুর্মা করিতে জানি |”
ম। তবে আমাকে পাকড়া করিলে কেন?
দ। নাম, তবে বলিব।
মবারক ঘোড়া হইতে নামিল। বলিল, “এখন বল |”
দরিয়া বলিল, “এই ভিড়ের ভিতর একজন জ্যোতিষী বসিয়া আছেন। ইনি নূতন
আসিয়াছেন। ইঁহার মত জ্যোতির্বিদ কখন নাকি আসে নাই। ইঁহার কাছে তোমাকে তোমার কেস্মৎ গণাইতে হইবে |”
ম। আমার কেস্মৎ জানিয়া তোমার কি হইবে? তোমার গণাও।
দ। আমার কেস্মৎ আমি জানিতে চাহি না। না গণাইয়াই তাহা জানিতে পারিয়াছি। তোমার কেস্মৎ জানাই আমার দরকার।
এই বলিয়া দরিয়া, মবারকের হাত ধরিয়া টানিয়া লইয়া যাইবার উপক্রম করিল। মবারক বলিল, “আমার ঘোড়া ধরে কে?”
গোটাকতক ছেলে রাজপথে দাঁড়াইয়া লাড্ডু খাইতেছিল। মবারক বলিল, “তোমরা কেহ এক লহমা আমার ঘোড়াটা ধরিয়া রাখ। আমি আসিয়া, তোমাদের আরও লাড্ডু দিব |”
এই বলিবামাত্র দুই তিনটা ছেলে আসিয়া ঘোড়া ধরিল। একটা প্রায় নগ্ন–সে ঘোড়ার উপর চড়িয়া বসিল। মবারক তাহাতে মারিতে গেলেন। কিন্তু তাহার প্রয়োজন হইল না–ঘোড়া একবার পিছনের পা উঁচু করিয়া তাহাকে ফেলিয়া দিল। তাহাকে ভূমিশয্যাগত দেখিয়া, অপর বালকেরা তাহার হাতের লাড্ডু কাড়িয়া লইয়া ভোজন করিল। তখন মবারক নিশ্চিন্ত হইয়া অদৃষ্ট গণাইতে গেলেন।
মবারককে দেখিয়া অপর লোক সকল পথ ছাড়িয়া দিল। দরিয়া বিবি তাঁহার সঙ্গে সঙ্গে গেল। জ্যোতিষীর কাছে মবারক হাত পাতিয়া দিলেন। জ্যোতিষী অনেক দেখিয়া শুনিয়া বলিল, “আপনি গিয়া বিবাহ করুন |” পশ্চাৎ হইতে, ভিড়ের ভিতর লুকাইয়া দরিয়া বিবি বলিল, “করিয়াছে |”
জ্যোতিষী বলিল, “কে ও কথা বলিল?”