রাজা। এখানে বাহুবলের কাজ নয়। বুদ্ধিবলই ভরসা। প্রতাপনগরে বুদ্ধিবল তুমি একা।

কলা। মহারাজ, আপনাকে যাইতে দিতে আমার মন সরিতেছে না।

রাজা। থাকিলেই কোন মঙ্গল! যুদ্ধেই কোন মঙ্গল!

কলা। মারহাট্টা যুদ্ধ করিতেছে-আমরা কি মানুষ নই?

রাজা। না, আমরা মানুষ নই। শিবাজীর কাজ কি আমার দ্বারা সম্ভবে? আমি যাওয়াই স্থির করিতেছি। এখন শয়নঘরে চলিলাম।

[নিষ্ক্রান্ত]

কলাবতী। (স্বগত) বিধাতা, যদি আমায় স্ত্রীলোক করিয়াছিলে তবে আমায়- দূর হৌক সে কথায় এখন আর কাজ কি? হায়! আমি রাণী কিন্তু রাজা কই? রাজা অভাবে প্রতাপনগর রক্ষা হইবে না। হায়! রাণী হইলাম ত রাজা পাইলাম না কেন?

(দিবার প্রবেশ)

(চক্ষু মুছিয়া) কি লো দিবি?

দিবা। এই কাগজটুকু কুড়িয়ে পেয়েছি। [এক পত্র দিল]

কলা। (পড়িলেন) “আমি রাজা রাজেন্দ্রের আজিও প্রবল শত্রু-প্রতাপনগর ধ্বংস করিয়া তোমাকে গ্রহণ করিব। নইলে ভালোয় ভালোয় এসো।”

এ পত্র কোথায় পাইলি?

দিবা। আজ্ঞে আমি কুড়িয়ে পেয়েছি।

কলা। তোকে ফাঁসি দিব। আবশ্যক হইলে আমি হুকুম দিই, তা তুই জানিস?

দিবা-জানি-তা আমি কুড়িয়ে না পেলুম তা কোথা পেলুম?

কলা। কোথা পেলি? তুই হাতে হাতে নিয়েছিস!

দিবা। মাইরি রাণীমা, আমি হাতে হাতে নিই নে।

কলা। তবে কোথায় পেলি বল, নইলে ফাঁসি দিব।

দিবা। আমি পায়রার গলায় পেয়েছি।

কলা। সে পায়রা কোথায়?

দিবা। পায়ে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছি।

কলা। কালি কলম নিয়ে আয়-জবাব লেখ্।

দিবা। কালি কলম আছে-কি লিখিব।

কলা। লেখ্, “আমি তোমার পরম শত্রু-তোমায় ধ্বংস করিয়া প্রতাপনগর রক্ষা করিব।” লেখা হইল?

দিবা। লিখেছি-পায়রার গলায় বেঁধে দিয়ে আসি?

কলা। দে গিয়ে।

দিবা। হাঁ রাণীমা এ কে মা-

কলা। চুপ! কথা মুখে আনিলে মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে দিব।             [দিবা নিষ্ক্রান্ত]

কলা। পায়ে কাঁটা ফুটিলে কাঁটা দিয়ে বাহির করিতে হয়, বুঝি আমাকে তাহাই করিতে হইবে।