অসম্পূর্ণ রচনা
নিশা। চক্ষু কর্ণ নাসিকা বন্ধ। রসনা বাকি আছে-চল ভাই রান্নামহলে খবর দিই।
রাজা। মুখ বুজিয়া থাকিব।
নিশা। তবে বড় মা ঠাকুরাণীকে ডেকে দিই।
রাজা। কেন সে ভয়ঙ্কর ব্যাপার কেন?
নিশা। ইন্দ্রিয়ের মধ্যে আপনার বাকি আছে পিঠের চামড়া।
(কলাবতীর প্রবেশ)
কলা। আ মলো, তোরা বড় বাড়ালি, দূর হ!
[সখীদ্বয় নিষ্ক্রান্ত]
রাজা। দেখত কলাবতী, তোমার লোকজন আমায় কিছু মানে না, আমার উপর বড় অত্যাচার করে!
কলা। কি অত্যাচার করেছে মহারাজ? একটু হাসিয়াছে? সেটা আমারই অপরাধ। তোমার মুখে কয় দিন হাসি দেখি নাই বলিয়া আমি ওদের পাঠাইয়া দিয়াছিলাম।
রাজা। আমার মাথায় পাহাড় ভেঙ্গে পড়ে-আমি হাসিব কি?
কলা। কি পাহাড় মহারাজ! আমায় ত কিছু বল নাই। যা ইচ্ছা করিয়া বল না-তা সাহস করিয়া জিজ্ঞাসা করি না। কি পাহাড় মহারাজ! পড়িলে তোমার একার ঘাড়ে পড়িবে না।
রাজা। পাহাড় আর কিছু নয়-খোদ দিল্লীশ্বর ঔরঙ্গজেব। এই ক্ষুদ্র রাজ্যের উপর নজর পড়িয়াছে, বাদশাহের যাহাতে নজর পড়ে তাহা তিনি না লইয়া ছাড়েন না।
কলা। এ সম্বাদ কোথা পাইলেন?
রাজা। আত্মীয়লোকে দূতমুখে বলিয়া পাঠাইয়াছে। বিশেষ, ঢাকায় সুবাদার অনেক সৈন্য জমা করিতেছেন। লোকে বলে প্রতাপনগরের জন্য।
কলা। কেন আমরা কি অপরাধ করিয়াছি?
রাজা। অপরাধ বিস্তর। প্রতাপনগর ধনধান্য পূর্ণ-লোক এখানে দারিদ্র্যশূন্য- আর আমরা হিন্দু! হিন্দুর ঐশ্বর্য্য বাদশাহের চক্ষুশূল।
কলা। যদি এ সম্বাদ সত্য হয়, তবে আমরাও যুদ্ধের উদ্যোগ না করি কেন?
রাজা। তুমি পাগল! দিল্লীশ্বরের সঙ্গে যুদ্ধ কি আমার সাধ্য! জয় কি হইবে?
কলা। না, তবে বিনা যুদ্ধে মরিব কেন?
রাজা। দেখি যদি বিনা যুদ্ধে কার্য্যোদ্ধার হয়। আমার ইচ্ছা একবার ঢাকায় যাই। আপনি সুবাদারের মন বুঝি, কোন ছলে যদি বশীভূত করিতে পারি করি।
কলা। এমন কর্ম্ম করিও না-ঔরঙ্গজেবের নায়েবকে বিশ্বাস কি? আর আসিতে দিবে না।
রাজা। সম্ভব-কিন্তু তাহাতে তাহার লাভ হইবে কি?
কলা। রাজহীন রাজ্য সহজে হস্তগত করিবে।
রাজা। আমি গেলে তুমি রাজ্যের রক্ষক থাকিবে।
কলা। ছি! স্ত্রীলোকের বাহুতে বল কি?