(৩) জগৎ রক্ষার্থ এবং ধর্ম্মাচরণের জন্য দম্পতিপ্রীতি। তাহা স্মরণ রাখিয়া এই প্রীতির অনুশীলন করিলে ইহাও নিষ্কাম ধর্ম্মে পরিণত হইতে পারে ও হওয়াই উচিত। নহিলে ইহা নিষ্কাম ধর্ম্ম নহে।

শিষ্য। আমি এই দম্পতিপ্রীতিকেই পাশব বৃত্তি বলি, অপত্যপ্রীতিকে পাশব বৃত্তি বলিতে তত সম্মত নহি। কেন না, পশুদিগেরও দাম্পত্য অনুরাগ আছে। সে অনুরাগও অতিশয় তীব্র।

গুরু। পশুদিগের দম্পতিপ্রীতি নাই।

শিষ্য।-

মধু দ্বিরেফঃ কুসুমৈকপাত্রে

পপৌ প্রিয়াং স্বামনুবর্ত্তমানঃ।

শৃঙ্গেণঃ চ স্পর্শনিমীলিতাক্ষীং

মৃগীমকণ্ডূয়ত কৃষ্ণসারঃ ||

দদৌ রসাৎ পঙ্কজরেণুগন্ধি

গজায় গণ্ডূষজলং করেণুঃ।

অর্দ্ধোপভুক্তেন বিসেন জায়াং

সম্ভাবয়ামাস রথাঙ্গনামা ||

গুরু। ওহো! কিন্তু আসল কথাটা ছাড়িয়া গেলে যে!

তং দেশমারোপিত পুষ্পচাপে

রতিদ্বিতীয়ে মদনে প্রপন্নে-ইত্যাদি।

রতি সহিত মন্মথ সেখানে উপস্থিত, তাই এই পাশব অনুরাগের বিকাশ। কবি নিজেই বলিয়া দিয়াছেন যে, এই অনুরাগ স্মরজ। ইহা পশুদিগেরও আছে, মনুষ্যেরও আছে। ইহাকে কামবৃত্তি বলিয়া পূর্ব্বে নির্দ্দিষ্ট করিয়াছি। ইহাকে দম্পতিপ্রীতি বলি না। ইহা পাশব বৃত্তি বটে, স্বতঃস্ফূর্ত্তি, এবং ইহার দমন অনুশীলন। কাম, সহজ; দম্পতিপ্রীতি সংসর্গজ; কামজনিত অনুরাগ ক্ষণিক, দম্পতিপ্রীতি স্থায়ী। তবে ইহা স্বীকার করিতে হয় যে, অনেক সময়ে এই কামবৃত্তি আসিয়া দম্পতিপ্রীতিস্থান অধিকার করে। অনেক সময়ে তাহার স্থান অধিকার না করুক, দম্পতিপ্রীতির সঙ্গে সংযুক্ত হয়। সে অবস্থায় যে পরিমাণে ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি, বাসনার প্রবলতা, সেই পরিমাণে দম্পতিপ্রীতিও পাশবতা প্রাপ্ত হয়। এই সকল অবস্থায় দম্পতিপ্রীতি অতিশয় বলবতী বৃত্তি হইয়া উঠে। এ সকল অবস্থায় তাহার সামঞ্জস্য আবশ্যক। যে সকল নিয়ম পূর্ব্বে বলা হইয়াছে, তাহাই সামঞ্জস্যের উত্তম উপায়।

শিষ্য। আমি যত দূর বুঝিতে পারি, এই কামবৃত্তিই সৃষ্টিরক্ষার উপায়। দম্পতিপ্রীতি ব্যতীত ইহার দ্বারাই জগৎ রক্ষিত হইতে পারে। ইহাই তবে নিষ্কাম ধর্ম্মে পরিণত করা যাইতে পারে। দম্পতিপ্রীতি যে নিষ্কাম ধর্ম্মে পরিণত করা যাইতে পারে, এমন বিচারপ্রণালী দেখিতেছি না।

গুরু। স্মরজ বৃত্তিও যে নিষ্কাম কর্ম্মের কারণ হইতে পারে, ইহা আমি স্বীকার করি। কিন্তু তোমার আসল কথাতেই ভুল। দম্পতিপ্রীতি ব্যতীত কেবল পাশব বৃত্তিতে জগৎ রক্ষা হইতে পারে না।

শিষ্য। পশুসৃষ্টি ত কেবল তদ্দ্বারাই রক্ষিত হইয়া থাকে।