ধর্ম্মতত্ত্ব
দ্বাবিংশতিতম অধ্যায়-আত্মপ্রীতি
শিষ্য। আপনাকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, নিষ্কাম আত্মরক্ষা কি রকম? আপনি বলিয়াছিলেন, “কাল উত্তর দিব।” সেই উত্তর এক্ষণে শুনিব ইচ্ছা করি।
গুরু। আমার এই ভক্তিবাদ সমর্থনার্থ কোন জড়বাদীর সহায়তা গ্রহণ করিব, তুমি এমন প্রত্যাশা কর না। তথাপি হর্বর্ট স্পেন্সরের একটি কথা তোমাকে পড়াইয়া শুনাইব।
“A creature must live before it can act. From this it is a corollary that the acts by which each maintain his own life must, speaking generally, precede in imperativeness all other acts of which he is capable. For if it be asserted that these other acts must precede in imperativeness the acts which maintain life; and if this, accepted as a general law of conduct, is conformed to by all; then by postponing the acts which maintain life to the other acts which life makes it possible, all must lost their lives… The acts required for conditioned self-preservation, including the enjoyment of benefits achieved by such acts, are the first requisites to universal welfare. Unless each duly cares for himself, his care for all others is ended by death; and if each thus dies, there remain no others to be cared for.” *
অতএব জগদীশ্বরের সৃষ্টিরক্ষার্থ আত্মরক্ষার্থ নিতান্ত প্রয়োজনীয়। জগদীশ্বরের সৃষ্টিরক্ষার্থ প্রয়োজনীয় বলিয়া ইহা ঈশ্বরোদ্দিষ্ট কর্ম্ম। ঈশ্বরোদ্দিষ্ট কর্ম্ম, এজন্য আত্মরক্ষাকেও নিষ্কাম কর্ম্মে পরিণত করা যাইতে পারে ও করাই কর্ত্তব্য।
এক্ষণে পরহিত ও পররক্ষার সঙ্গে এই আত্মরক্ষার তুলনা করিয়া দেখ। পরহিত ধর্ম্মাপেক্ষা আত্মরক্ষা ধর্ম্মের গৌরব অধিক। যদি জগতে লোকে পরস্পরের হিত না করে, পরস্পরের রক্ষা না করে, তাহাতে জগৎ মনুষ্যশূন্য হইবে না। অসভ্য সমাজ সকল ইহার উদাহরণ। কিন্তু সকলে আত্মরক্ষায় বিরত হইলে, সভ্য কি অসভ্য, কোন সমাজ কোন প্রকার মনুষ্য বা জীব জগতে থাকিবে না। অতএব পরহিতের আগে আপনার প্রাণরক্ষা।
শিষ্য। এ সকল অতি অশ্রদ্ধেয় কথা বলিয়া আমার বোধ হইতেছে। মনে করুন, পরকে না দিয়া আপনি খাইব?
গুরু। তুমি যাহা কিছু আহার্য্য সংগ্রহ কর, তাহা যদি সমস্তই প্রত্যহ অন্যকে বিলাইয়া দাও, তবে পাঁচ-সাত দিনে তোমার দানধর্ম্মের শেষ হইবে। কেন না, তুমি নিজে না খাইয়া মরিয়া যাইবে। পরকে দিবে, কিন্তু পরকে দিয়া আপনি খাইবে। যদি পরকে দিতে না কুলায়, তবে কাজেই আহারের জন্য প্রত্যহ তিনটা পাঁঠা, দেড় কুড়ি মাছের প্রাণ সংহার হয়, তাঁর কাজেই পরকে দিতে কুলায় না। যে সর্ব্বভূতে সমান দেখে, আপনাতে ও পরে সমান দেখে, সে পরকে যেমন দিতে পারে, আপনি তেমনই খায়। ইহাই ধর্ম্ম-আপনি উপবাস করিয়া পরকে দেওয়া ধর্ম্ম নহে। কেন না, আপনাতে ও পরে সমান করিতে হইবে।
শিষ্য। ভাল, আমার প্রযুক্ত উদাহরণটা না হয়, অনুপযুক্ত হইয়াছে। কিন্তু কখন কি পরোপকারার্থ আপনার প্রাণ বিসর্জ্জন করা কর্ত্তব্য নহে?
* Data of Ethics, Chap. XI [p. 187.] Italic যে যে শব্দে দেওয়া হইল, তাহা আমার দেওয়া।