মৃণালিনী
গি। সবার যে ব্যবসা, তারও সেই ব্যবসা।
মৃ। সে কিসের ব্যবসা?
গি। কথার ব্যবসা।
মৃ। এ নূতন ব্যবসা বটে। তাহাতে লাভালাভ কিরূপ?
গি। ইহাতে লাভের অংশ ভালবাসা, অলাভ কোন্দল।
মৃ। তুমিও ব্যবসায়ী বটে। ইহার মহাজন কে?
গি। যে মহাজন।
মৃ। তুমি ইহার কি?
গি। নগ্দাই মুটে।
মৃ। ভাল তোমার বোঝা নামাও। সামগ্রী কি আছে দেখি।
গি। এ সামগ্রী দেখে না; শুনে।
মৃ। ভাল-শুনি।
গিরিজায়া গায়িতে লাগিল-
“যমুনার জলে মোর, কি নিধি মিলিল।
ঝাঁপ দিয়া পশি জলে, যতনে তুলিয়া গলে,
পরেছিনু কুতূহলে, যে রতনে।
নিদ্রার আবেশে মোর গৃহেতে পলিশ চোর,
কণ্ঠের কাটিল ডোর মণি হরে নিল |”
মৃণালিনী, বাষ্পপীড়িতলোচনে, গদ্গদস্বরে, অথচ হাসিয়া কহিলেন, “এ কোন্ চোরের কথা?”
গি। বেণে বলেছেন, চুরির ধন লইয়াই তাঁহার ব্যাপার।
মৃ। তাঁহাকে বলিও যে, চোরা ব্যাপারে সাধু লোকের প্রাণ বাঁচে না।
গি। বুঝি ব্যাপারিরও নয়।
মৃ। কেন, ব্যাপারির কি?
গিরিজায়া গায়িল-
“ঘাট বাট তট মাঠ ফিরি ফিরনু বহু দেশ |
কাঁহা মেরে কান্ত বরণ, কাঁহা রাজবেশ ||
হিয়া পর রোপনু পঙ্কজ, কৈনু যতন ভারি |
সোহি পঙ্কজ কাঁহা মোর, কাঁহা মৃণাল হামারি ||”
মৃণালিনী সস্নেহে কোমল স্বরে কহিলেন, “মৃণাল কোথায়? আমি সন্ধান বলিয়া দিতে পারি, তাহা মনে রাখিতে পারিবে?”
গি। পারিব- কোথায় বল।
মৃণালিনী বলিলেন,
“কণ্টকে গঠিল বিধি, মৃণাল অধমে |
জলে তারে ডুবাইল পীড়িয়া মরমে ||
রাজহংস দেখি এক নয়নরঞ্জন |
চরণ বেড়িয়া তারে, করিল বন্ধন ||
বলে হংসরাজ কোথা করিবে গমন |
হৃদয়কমলে মোর, তোমার আসন ||
আসিয়া বসিল হংস হৃদয়কমলে |
কাঁপিল কণ্টক সহ মৃণালিনী জলে ||
হেনকালে কাল মেঘ উঠিল আকাশে |
উড়িল মরালরাজ, মানস বিলাসে ||
ভাঙ্গিল হৃদয়পদ্ম তার বেগভরে |
ডুবিল অতল জলে, মৃণালিনী মরে ||