তৃতীয় পরিচ্ছেদ : ভিখারিণী

সখীদ্বয় এই সকল কথাবার্তা কহিতেছিলেন, এমন সময়ে কোমলকণ্ঠনি:সৃত মধুর সঙ্গীত তাঁহাদিগের কর্ণরন্ধ্রে প্রবেশ করিল।

“মথুরাবাসিনি, মধুরহাসিনি,

    শ্যামবিলাসিনি-রে!”

মৃণালিনী কহিলেন, “সই, কোথায় গান করিতেছে?”

মণিমালিনী কহিলেন, “বাহির বাড়ীতে গায়িতেছে!”

গায়ক গায়িতে লাগিল।

“কহ লো নাগরি, গেহ পরিহরি,

    কাহে বিবাসিনী-রে |”

মৃ। সখি! কে গায়িতেছে জান?

ম। কোন ভিখারিণী হইবে।

আবার গীত-

“বৃন্দাবনধন, গোপিনীমোহন,

    কাঁহে তু তেয়াগী-রে;

দেশ দেশ পর, সো শ্যামসুন্দর,

    ফিরে তুয়া লাগি-রে |”

মৃণালিনী বেগের সহিত কহিলেন, “সই! সই! উহাকে বাটীর ভিতর ডাকিয়া আন |”

মণিমালিনী গায়িকাকে ডাকিতে গেলেন। ততক্ষণ সে গায়িতে লাগিল-

“বিকচ নলিনে, যমুনা-পুলিনে,

    বহুত পিয়াসা-রে।

চন্দ্রমাশালিনী, যা মধুযামিনী,

    না মিটল আশা-রে।

    সা নিশা-সমরি___”

এমন সময়ে মণিমালিনী উহাকে ডাকিয়া বাটীর ভিতর আনিলেন।

সে অন্ত:পুরে আসিয়া পূর্ববৎ গায়িতে লাগিল-

“সা নিশা সমরি, কহ লো সুন্দরি,

    কাহা মিলে দেখা-রে।

শুনি যাওয়ে চলি, বাজয়ি মুরলী,

    বনে বনে একা-রে |”

মৃণালিনী তাহাকে কহিলেন, “তোমার দিব্য গলা, তুমি গীতটি আবার গাও |”