কপালকুণ্ডলা
চতুর্থ পরিচ্ছেদ : রাজনিকেতনে
“পত্নীভাবে আর তুমি ভেবো না আমারে |”
বীরাঙ্গানা কাব্য
মতি আগ্রায় উপনীতা হইলেন। আর তাঁহাকে মতি বলিবার আবশ্যক করে না। কয়দিনে তাঁহার চিত্তবৃত্তিসকল একেবারে পরিবর্তিত হইয়াছিল।
জাহাঁগীরের সহিত তাঁহার সাক্ষাৎ হইল। জাহাঁগীর তাঁহাকে পূর্ববৎ সমাদর করিয়া, তাঁহার সহোদরের সংবাদ ও পথের কুশল জিজ্ঞাসা করিলেন। লুৎফ-উন্নিসা যাহা মেহের-উন্নিসাকে বলিয়াছিলেন, তাহা সত্য হইল। অন্যান্য প্রসঙ্গের পর বর্ধমানের কথা শুনিয়া, জাহাঁগীর জিজ্ঞাসা করিলেন,
“মেহের-উন্নিসার নিকট দুই দিন ছিলে বলিতেছ, মেহের-উন্নিসা আমার কথা কি বলিল?” লুৎফ-উন্নিসা অকপটহৃদয়ে মেহের-উন্নিসার অনুরাগের পরিচয় দিলেন। বাদশাহ শুনিয়া নীরবে রহিলেন; তাঁহার বিস্ফারিত লোচনে দুই এক বিন্দু অশ্রু বহিল।
লুৎফ-উন্নিসা কহিলেন, “জাহাঁপনা! দাসী শুভ সংবাদ দিয়াছে। দাসীর এখনও কোন পুরস্কারের আদেশ হয় নাই |”
বাদশাহ হাসিয়া কহিলেন, “বিবি! তোমার আকাঙ্ক্ষা অপরিমিত |”
লু। জাহাঁপনা! দাসীর কি দোষ?
বা। দিল্লীর বাদশাহকে তোমার গোলাম করিয়া দিয়াছি; আরও পুরস্কার চাহিতেছ? লুৎফ-উন্নিসা হাসিয়া কহিলেন, “স্ত্রীলোকের অনেক সাধ |”
বা। আবার কি সাধ হইয়াছে?
লু। আগে রাজাজ্ঞা হউক যে, দাসীর আবেদন গ্রাহ্য হইবে।
বাদ। যদি রাজকার্যের বিঘ্ন না হয়।
লু। (হাসিয়া) একের জন্য দিল্লীশ্বরের কার্যের বিঘ্ন হয় না।
বা। তবে স্বীকৃত হইলাম;-সাধটি কি শুনি।
লু। সাধ হইয়াছে একটি বিবাহ করিব।
জাহাঁগীর উচ্চ হাস্য করিয়া উঠিলেন। কহিলেন, “এ নূতনতর সাধ বটে। কোথাও সম্বন্ধের স্থিরতা হইয়াছে?”
লু। তা হইয়াছে। কেবল রাজাজ্ঞার অপেক্ষা। রাজার সম্মতি প্রকাশ না হইলে কোন সম্বন্ধ স্থির নহে।
বা। আমার সম্মতির প্রয়োজন কি? কাহাকে এ সুখের সাগরে ভাসাইবে অভিপ্রায় করিয়াছ?
লু। দাসী দিল্লীশ্বরের সেবা করিয়াছে বলিয়া দ্বিচারিণী নহে। দাসী আপন স্বামীকেই বিবাহ করিবার অনুমতি চাহিতেছে।
বা। বটে! এ পুরাতন নফরের দশা কি করিবে?
লু। দিল্লীশ্বরী মেহের-উন্নিসাকে দিয়া যাইব।
বা। দিল্লীশ্বরী মেহের-উন্নিসা কে?
লু। যিনি হইবেন।