কপালকুণ্ডলা
পুরস্কারপূর্বক দূতকে বিদায় করিয়া, মতি পেষমনকে পত্র শুনাইলেন। পেষমন্ কহিল, “এক্ষণে উপায়?”
ম। এখন আর উপায় নাই।
পে। (ক্ষণেক চিন্তা করিয়া) ভাল, ক্ষতিই বা কি? যেমন ছিলে, তেমনই থাকিবে মোগল বাদশাহের পুরস্ত্রীমাত্রই অন্য রাজ্যের পাটরাণী অপেক্ষাও বড়।
ম। (ঈষৎ হাসিয়া) তাহা আর হয় না। আর সে রাজপুরে থাকিতে পারিব না। শীঘ্রই মেহের-উন্নিসার সহিত জাহাঁগীরের বিবাহ হইবে। মেহের-উন্নিসাকে আমি কিশোর বয়োবধি ভাল জানি; একবার সে পুরবাসিনী হইলে সেই বাদশাহ হইবে; জাহাঁগীর বাদশাহ নামমাত্র থাকিবে। আমি যে তাহার সিংহাসনারোহণের পথরোধের চেষ্টা পাইয়াছিলাম; ইহা তাহার অবিদিত থাকিবে না। তখন আমার দশা কি হইবে?
পেষমন্ প্রায় রোদনোণ্মুখী হইয়া কহিল, “তবে কি হইবে?”
মতি কহিলেন, “এক ভরসা আছে। মেহের-উন্নিসার চিত্ত জাহাঁগীরের প্রতি কিরূপ? তাহার যেরূপ দার্ঢ্য, তাহাতে যদি সে জাহাঁগীরের প্রতি অনুরাগিণী না হইয়া স্বামীর প্রতি যথার্থ স্নেহশালিনী হইয়া থাকে, তবে জাহাঁগীর শত শের আফগন বধ করিলেও মেহের-উন্নিসাকে পাইবেন না। আর যদি মেহের-উন্নিসা জাহাঁগীরের যথার্থ অভিলাষিণী হয়, তবে আর কোন ভরসা নাই |”
পে। মেহরর-উন্নিসার মন কি প্রকারে জানিবে?
মতি হাসিয়া কহিলেন, “লুৎফ-উন্নিসার অসাধ্য কি? মেহের-উন্নিসা আমার বাল্যসখী,--কালি বর্ধমানে গিয়া তাহার নিকট দুই দিন অবস্হিতি করিব।“
পে। যদি মেহের-উন্নিসা বাদশাহের অনুরাগিণী হন, তাহা হইলে কি করিবে?
ম। পিতা কহিয়া থাকেন, “ক্ষেত্রে কর্ম বিধীয়তে |”
উভয়ে ক্ষণেক নীরব হইয়া রহিলেন। ঈষৎ হাসিতে মতির ওষ্ঠাধর কুঞ্চিত হইতে লাগিল। পেষমন্ জিজ্ঞাসা করিল, “হাসিতেছ কেন?”
মতি কহিলেন, “কোন নূতন ভাব উদয় হইতেছে |”
পে। কি নূতন ভাব?
মতি তাহা পেষমন্িকে বলিলেন না। আমরাও পাঠককে বলিব না। পশ্চাৎ প্রকাশ পাইবে।