রাজসিংহ
নি । বিশেষ সংবাদ আছে।
তখন জেব-উন্নিসা উঠিয়া গেলেন। চঞ্চল জিজ্ঞাসা করিলেন, “যুদ্ধের সংবাদ না কি?”
নি । আজ্ঞা হাঁ।
চ। তা ত লোকপরম্পরায় শুনিয়াছি। ইন্দুর গর্তের ভিতর প্রবেশ করিয়াছে। মহারাণার গর্তের মুখ বুজাইয়া দিয়াছেন। শুনিয়াছি, ইন্দুর না কি গর্তের ভিতর মরিয়া পচিয়া থাকিবার মত হইয়াছে।
নি। তার পর, আর একটা কথা আছে। ইন্দুর বড় ক্ষুধার্ত। আমার সেই পায়রাটি আজ ফিরিয়া আসিয়াছে। বাদশাহ ছাড়িয়া দিয়াছেন–তাহার পায়ে একখানি রোক্কা বাঁধিয়া দিয়াছেন।
চ। রোককা দেখিয়াছ?
নি। দেখিয়াছি।
চ। কাহার বরাবর?
নি। ইমলি বেগম।
চ। কি লিখিয়াছে?
নির্মল পত্রখানি বাহির করিয়া কিয়দংশ এইরূপ পড়িয়া শুনাইলেন,-
“আমি তোমায় যেরূপ স্নেহ করিতাম, কোন মনুষ্যকে কখনও এমন স্নেহ করি নাই। তুমিও আমার অনুগত হইয়াছিলে। আজ পৃথিবীশ্বর দুর্দশাপন্ন–লোকের মুখে শুনিয়া থাকিবে। অনাহারে মরিতেছি। দিল্লীর বাদশাহ আজ এক টুকরা রুটির ভিখারী। কোন উপকার করিতে পার না কি? সাধ্য থাকে, করিও। এখনকার উপকার কখনও ভুলিব না |”
শুনিয়া চঞ্চলকুমারী জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি উপকার করিবে?”
নির্মল বলিলেন, “তাহা বলিতে পারি না। আর কিছু না পারি, বাদশাহের জন্য আর যোধপুরী বেগমের জন্য কিছু খাদ্য পাঠাইয়া দিব |”
চ। কি রকমে? সেখানে ত মনুষ্য সমাগমের পথ নাই।
নি। তাহা এখন বলিতে পারি না। আমায় একবার শিবিরে যাইতে অনুমতি দিন। কি করিতে পারি, দেখিয়া আসি।
চঞ্চলকুমারী অনুমতি দিলেন। নির্মলকুমারী গজপৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া, রক্ষিবর্গ পরিবেষ্টিত হইয়া, শিবিরে স্বামিসন্দর্শনে গেলেন। যাইবামাত্র মাণিকলালের সঙ্গে সাক্ষাৎ হইল। মাণিকলাল জিজ্ঞাসা করিলেন, “যুদ্ধের অভিপ্রায়ে না কি?”
নি। কাহার সঙ্গে যুদ্ধ করিব? তুমি আমার যুদ্ধের যোগ্য?
মাণিক। তা ত নই। কিন্তু আলমগীর বাদশাহ?
নি। আমি তাঁর ইমলি বেগম–তাঁর সঙ্গে কি যুদ্ধের সম্বন্ধ? আমি তাঁর উদ্ধারের জন্য আসিয়াছি। আমি যাহা আজ্ঞা করি, তাহা মনোযোগপূর্বক শ্রবণ কর।
তার পর মাণিকলালে ও নির্মলকুমারীতে কি কথোপকথন হইল, তাহা আমরা জানি না। অনেক কথা হইল, ইহাই জানি।
মাণিকলাল নির্মলকুমারীকে উদয়পুরে প্রতিপ্রেরণ করিয়া, রাজসিংহের সাক্ষাৎকারলাভের অভিপ্রায়ে রাণার তাম্বুতে গেলেন।