রাজসিংহ
ঔ। আমার বিচারে এই হইতেছে যে, তুমি রাজপুতের কন্যা, রাজপুত তোমার স্বামী, তুমি রাজপুতমহিষীর সখী–তুমি রাজপুতেরই।
নি । জাঁহাপনা! বিচার কি ঠিক হইল? আমি রাজপুতের কন্যা বটে, কিন্তু হজরৎ যোধপুরীও তাই। আপনার পিতামহী ও প্রপিতামহীও তাই–তাঁহারা মোগল বাদশাহের হিতাকাঙ্ক্ষিণী ছিলেন না কি?
ঔ। ইহারা মোগল বাদশাহের বেগম, তুমি রাজপুতের স্ত্রী।
নি । (হাসিয়া) আমি শাহনশাহ আলমগীর বাদশাহের ইমলি বেগম।
ঔ। তুমি রূপনগরীর সখী।
নি । যোধপুরীরও তাই।
ঔ। তবে তুমি আমার।
নি । আপনি যেমন বিবেচনা করেন।
ঔ। আমি তোমাকে সে একটি কার্য নিযুক্ত করিতে চাই। তাহাতে আমার উপকার আছে, রাজসিংহের অনিষ্ট আছে। এমন কার্য তোমাকে নিযুক্ত করিতে ইচ্ছা করি, তুমি তাহা করিবে?
নি। কি কার্য, তাহা না জানিলে আমি বলিতে পারি না। আমি কোন দেবতা ব্রাহ্মণের অনিষ্ট করিতে পারিব না।
ঔ। আমি তোমাকে সে সব কিছু করিতে বলিব না। আমি উদয়পুর নগর দখল করিব– রাজসিংহের রাজপুরী দখল করিব, সে সকল বিষয়ে আমার কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু রাজপুরী দখল হইলে পর রূপনগরীকে হস্তগত করিতে পারিব কি না সন্দেহ। তুমি সেই বিষয়ে সহায়তা করিবে।
নি। আমি আপনার নিকট গঙ্গাজী যমুনাজীর শপথ করিতেছি যে, আপনি যদি উদয়পুরের রাজপুরী দখল করেন, তবে আমি চঞ্চলকুমারীকে আনিয়া আপনার হস্তে সমর্পণ করিব।
ঔ। সে কথা বিশ্বাস করি; কেন না, তুমি নিশ্চয় জান যে, যে আমার সঙ্গে প্রবঞ্চনা করে, তাহাতে টুকরা টুকরা কাটিয়া কুকুরকে খাওয়াইতে পারি।
নি। পারেন কি না, সে বিষয়ের বিচার হইয়া গিয়াছে। কিন্তু আমি শপথ করিয়া বলিতেছি, আমি আপনাকে প্রবঞ্চনা করিব না। তবে আপনি পুরী অধিকার করার পর তাহাকে আমি জীবিত পাইব কি না সন্দেহ। রাজপুতমহিষীদিগের রীতি এই যে, শত্রুর হাতে পড়িবার আগে চিতায় পুড়িয়া মরে। তাহাকে জীবিত পাইব না বলিয়াই এ কথা স্বীকার করিতেছি। নহিলে আমা হইতে চঞ্চলকুমারীর কোন অনিষ্ট ঘটিবে না।
ঔ। ইহাতে অনিষ্ট কি? সে ত বাদশাহের বেগম হইবে।
নির্মল উত্তর করিতে যাইতেছিল, এমন সময়ে খোজা আসিয়া নিবেদন করিল, “পেশকার দরবারে হাজির, জরুরি আর্জি পেশ করিবে। হজরৎ শাহজাদা আকব্বর শাহের সংবাদ আসিয়াছে |”
ঔরঙ্গজেব অতিশয় ব্যস্ত হইয়া দরবারে গেলেন। পেশকার আর্জি পেশ করিল। ঔরঙ্গজেব শুনিলেন, আকব্বরের পঞ্চাশ হাজার মোগল সেনা ছিন্নভিন্ন হইয়া প্রায় নি:শেষে নিহত হইয়াছে। হতাবশিষ্ট কোথায় পলায়ন করিয়াছে, কেহ জানে না।
ঔরঙ্গজেব তখনই শিবির ভঙ্গ করিতে আজ্ঞা দিলেন।
আকব্বরের সংবাদ রঙমহালেও পৌঁছিল। শুনিয়া নির্মলকুমারী পেশোয়াজ পরিয়া দ্বার রুদ্ধ করিয়া যোধপুরী বেগমের নিকট রূপনগরী নাচের মহলা দিল।