যুবতী। রাজকুমারীকে দিল্লী লইয়া যাইতেছে। আমি সঙ্গে যাইতে চাহিতেছিলাম, কিন্তু তিনি আমাকে সঙ্গে লইয়া যাইতে রাজি হয়েন নাই। ফেলিয়া আসিয়াছেন। আমি তাই হাঁটিয়া তাঁহার কাছে যাইতেছিলাম।

মাণিকলাল বলিল, “তাই পথশ্রান্ত হইয়া পড়িয়া আছ?”

নির্মললকুমারী বলিল, “অনেক পথ হাঁটিয়াছি–আর পারিতেছি না |”

পথ এমন বেশী নয়–তবে নির্মাল কখনও পথ হাঁটে না, তার পক্ষে অনেক বটে।

মা। তবে এখন কি করিবে?

নি । কি করিব–এইখানেই মরিব।

মা। ছি! মরিবে কেন? রাজকুমারীর কাছে চল না কেন?

ধর্মেি । যাইব কি প্রকারে? হাঁটিতে পারিতেছি না, দেখিতেছ না?

মা। কেন, ঘোড়ায় চল না?

নির্মেল হাসিল, বলিল, “ঘোড়ায়?”

মা। ঘোড়ায়। ক্ষতি কি?

নি । আমি কি সওয়ার?

মা। হও না।

নি । আপত্তি নাই। তবে একটা প্রতিবন্ধক আছে–ঘোড়ায় চড়িতে জানি না।

মা। তার জন্য কি আটকায়? আমার ঘোড়ায় চড় না?

নি । তোমার ঘোড়া কলের? না মাটির?

মা। আমি ধরিয়া থাকিব।

নির্মমল লজ্জারহিতা হইয়া রসিকতা করিতেছিল–এবার মুখ ফিরাইল। তার পর ভ্রূকুটি করিল; রাগ করিয়া বলিল, “আপনি আপনার কাজে যান, আমি আমার গাছতলায় পড়িয়া থাকি। রাজকুমারীর সঙ্গে সাক্ষাতে আমার কাজ নাই |”

মাণিকলাল দেখিল, মেয়েটি বড় সুন্দরী। লোভ সামলাইতে পারিল না। বলিল, “হাঁ গা! তোমার বিবাহ হইয়াছে?”

রহস্যপরায়ণা নির্মইল মাণিকলালের রকম দেখিয়া হাসিল, বলিল, “না |”

মা। তুমি কি জাতি?

নি । আমি রাজপুতের মেয়ে।

মা। আমিও রাজপুতের ছেলে। আমারও স্ত্রী নাই। আমার একটি ছোট মেয়ে আছে, তার একটি মা খুঁজি। তুমি তার মা হইবে? আমায় বিবাহ করিবে? তা হইলে আমার সঙ্গে একত্র ঘোড়ায় চড়ায় কোন আপত্তি হয় না।

নি । শপথ কর।

মা। কি শপথ করিব?

নি । তরবার ছুঁইয়া শপথ কর যে, আমাকে বিবাহ করিবে।

মাণিকলাল তরবারি স্পর্শ করিয়া শপথ করিল যে, “যদি আজিকার যুদ্ধে বাঁচি, তবে তোমাকে বিবাহ করিব |”

নির্ম”ল বলিল, “তবে চল, তোমার ঘোড়ায় চড়ি |”

মাণিকলাল তখন সহর্ষচিত্তে নির্মলল কে অশ্বপৃষ্ঠে উঠাইয়া, সাবধানে তাহাকে ধরিয়া অশ্বচালনা করিতে লাগিল।

বোধ হয়, কোর্ট শিপ্‌টা পাঠকের বড় ভাল লাগিল না। আমি কি করিব? ভালবাসাবাসির কথা একটাও নাই–বহুকালসঞ্চিত প্রণয়ের কথা কিছু নাই–“হে প্রাণ!” “হে প্রাণাধিক!” সে সব কিছুই নাই–ধিক্!