রাধারাণী
দে। চাক্ষুষ সাক্ষাতেই বা কি আপত্তি? আমি যে আট বৎসর কাতর!
ভিতরে ভিতরে দুইজনে দুইজনকে বুঝিতেছেন কিনা জানি না, কিন্তু কথাবার্তা এইরূপ হইতে লাগিল। রাধারাণী বলিতে লাগিল, “সে কথাটায় তত বিশ্বাস হয় না। আপনি আট বৎসর পূর্বে তাহাকে দেখিয়াছিলেন, তখন তাহার বয়স কত?
দে। এগার হইবে।
রা। এগার বৎসরের বালিকার উপর এত অনুরাগ?
দে। হয় না কি?
রা। কখনও শুনি নাই।
দে। তবে মনে করুন কৌতূহল!
রা। সে আবার কি?
দে। শুধুই দেখিবার ইচ্ছা।
রা। তা, দেখাইব, ঐ বড় আয়নার ভিতর। আপনি বাহিরে থাকিবেন।
দে। কেন, সম্মুখ সাক্ষাতে আপত্তি কি?
রা। সে কুলের কুলবতী।
দে। আপনিও ত তাই।
রা। আমার কিছু বিষয় আছে। নিজে তাহার তত্ত্বাবধান করি। সুতরাং সকলের সমুখেই আমাকে বাহির হইতে হয়। আমি কাহারও অধীন নই। সে তাহার স্বামীর অধীন, স্বামীর অনুমতি ব্যতীত–
দে। স্বামী!
রা। হাঁ! আশ্চর্য হইলেন যে?
দে। বিবাহিতা!
রা। হিন্দুর মেয়ে–ঊনিশ বৎসর বয়স–বিবাহিতা নহে?
দেবেন্দ্রনারায়ণ অনেক্ষণ মাথায় হাত দিয়া রহিলেন। রাধারাণী বলিলেন, “কেন, আপনি কি তাহাকে বিবাহ করিতে ইচ্ছা করিয়াছিলেন?”
দে। মানুষ কি না ইচ্ছা করে?
রা। এরূপ ইচ্ছা রাণীজি জানিতে পারিয়াছেন কি?
দে। রাণীজি কেহ ইহার ভিতর নাই। রাধারাণী-সাক্ষাতের অনেক পূর্বেই আমার পত্নী- বিয়োগ হইয়াছে।
রাধারাণী আবার যুক্তকরে ডাকিল, “জয় জগদীশ্বর! আর ক্ষণকাল যেন আমার এমনই সাহস থাকে |” প্রকাশ্যে বলিল, “তা শুনিলেন ত, রাধারাণী পরস্ত্রী। এখনও কি তাহর দর্শন করিতে অভিলাষ করেন?”
দে। করি বৈ কি।
রা। সে কথাটা কি আপনার যোগ্য?
দে। রাধারাণী আমার সন্ধান করিয়াছিল কেন, তাহা এখনও আমার জানা হয় নাই।
রা। আপনি রাধারাণীকে যাহা দিয়াছিলেন, তাহা পরিশোধ করিবে বলিয়া। আপনি শোধ লইবেন কি?
দেবেন্দ্র হাসিয়া বলিলেন, “যা দিয়াছি, তাহা পাইলে লইতে পারি |”
রা। কি কি দিয়াছেন?
দে। একখানা নোট।