ইন্দিরা
সুভাষিণী, তাঁহার নিকট গিয়া, আমি না শুনিতে পাই, এমন স্বরে বলিলেন, “আমার হুকুম।” কিন্তু আমি শুনিতে পাইলাম। তাঁর স্বামীও তেমনই স্বরে বলিলেন, “যে আজ্ঞা।”
সু। কখন পারিবে।
স্বামী। খাওয়ার সময়।
তিনি গেলে আমি বলিলাম, “উনি যেন রাখাইলেন, কিন্তু এমন কটু কথা সয়ে আমি থাকি কি প্রকারে?”
সু। সে পরের কথা পরে হবে। গঙ্গা ত আর এক দিনে বুজিয়ে যাইবে না।
রাত্রি নয়টার সময়, সুভাষিণীর স্বামী (তাঁর নাম রমণ বাবু) আহার করিতে আসিলেন। তাঁর মা কাছে গিয়া বসিল। সুভাষিণী আমাকে টানিয়া লইয়া চলিল, বলিল, “কি হয় দেখি গে চল।”
আমরা আড়াল হইতে দেখিলাম, নানাবিধ ব্যঞ্জন রান্না হইয়াছে, কিন্তু রমণ বাবু একবার একটু করিয়া মুখে দিলেন, আর সরাইয়া রাখিলেন। কিছুই খাইলেন না। তাঁর মা জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিছুই ত খেলি না বাবা!”
পুত্র বলিল, “ও রান্না ভূতপ্রেতে খেতে পারে না। বামন ঠাকুরাণীর রান্না খেয়ে খেয়ে অরুচি জন্মে গেছে। মনে করেছি কাল থেকে পিসীমার বাড়ী গিয়ে খেয়ে আসব।”
তখন গৃহিণী ছোট হয়ে গেলেন। বলিলেন, “তা করিতে হবে না যাদু! আমি আর রাঁধুনী আনাইতেছি।”
বাবু হাত ধুইয়া উঠিয়া গেলেন। দেখিয়া সুভাষিণী বলিলেন, “আমাদের জন্য ভাই ওঁর খাওয়া হইল না। তা না হোক—কাজটা হইলে হয়।”
আমি অপ্রতিভ হইয়া কি বলিতেছিলাম, এমন সময়ে হারাণী আসিয়া সুভাষিণীকে বলিল, “তোমার শাশুড়ী ডাকিতেছেন।” এই বলিয়া সে খামখা আমার দিকে চাহিয়া একটু হাসিল। আমি বুঝিয়াছিলাম, হাসি তার রোগ, সুভাষিণী শাশুড়ীর কাছে গেল, আমি আড়াল হইতে শুনিতে লাগিলাম।
সুভাষিণীর শাশুড়ী বলিতে লাগিল, “সে কায়েৎ ছুঁড়ীটে চলে গেছে কি?”
সু। না—তার এখনও খাওয়া হয় নাই বলিয়া, যাইতে দিই নাই।
গৃহিণী বলিলেন, “সে রাঁধে কেমন?”
সুভা। তা জানি না।
গৃ। আজ না হয় সে নাই গেল। কাল তাকে দিয়া দুই একখানা রাঁধিয়ে দেখিতে হইবে।
সু। তবে তাকে রাখি গে।
এই বলিয়া সুভাষিণী আমার কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, “ভাই, তুমি রাঁধিতে জান ত?”
আমি বলিলাম, “জানি। তা ত বলেছি।”
সু। ভাল রাঁধিতে পার ত?
আমি। কাল খেয়ে দেখে বুঝিতে পারিবে।
সু। যদি অভ্যাস না থাকে তবে বল, আমি কাছে বসিয়া শিখিয়ে দিব।
আমি হাসিলাম। বলিলাম, “পরের কথা পরে হবে।”