সু। সে কি মা! দেশসুদ্ধ সব সমত্ত লোক কি মন্দ?

গৃ। তা নাই হলো—তবে ছোট লোক যারা খেটে খায় তারা কি ভাল?

এবার কান্না রাখিতে পারিলাম না। কাঁদিয়া উঠিয়া গেলাম। কালির বোতলটা পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসা করিল, “ছুঁড়ী চলল না কি?”

সুভাষিণী বলিল, “বোধ হয়।”

গৃ। তা যাক গে।

সু। কিন্তু গৃহস্থ বাড়ী থেকে না খেয়ে যাবে? উহাকে কিছু খাওয়াইয়া বিদায় করিতেছি।

এই বলিয়া সুভাষিণী আমার পিছু পিছু উঠিয়া আসিল। আমাকে ধরিয়া আপনার শয়নগৃহে লইয়া গেল। আমি বলিলাম, “আর আমায় ধরিয়া রাখিতেছ কেন? পেটের দায়ে, কি প্রাণের দায়ে, আমি এমন সব কথা শুনিবার জন্য থাকিতে পারিব না।”

সুভাষিণী বলিল, “থাকিয়া কাজ নাই। কিন্তু আমার অনুরোধে আজিকার রাত্রিটা থাক।”

কোথায় যাইব? কাজেই চক্ষু মুছিয়া সে রাত্রিটা থাকিতে সম্মত হইলাম। একথা ওকথার পর সুভাষিণী জিজ্ঞাসা করিল, “এখানে যদি না থাক, তবে যাবে কোথায়?”

আমি বলিলাম, “গঙ্গায়।”

এবার সুভাষিণীও একটু চক্ষু মুছিল। বলিল, “গঙ্গায় যাইতে হইবে না, আমি কি করি তা একটুখানি বসিয়া দেখ। গোলযোগ উপস্থিত করিও না—আমার কথা শুনিও।”

এই বলিয়া সুভাষিণী হারাণী বলিয়া ঝিকে ডাকিল। হারাণী সুভাষিণীর খাস ঝি। হারাণী আসিল। মোটাসোটা, কালো কুচকুকচে, চল্লিশ পার, হাসি মুখে ধরে না, সকলটাতেই হাসি। একটু তিরবিরে। সুভাষিণী বলিল, “একবার তাঁকে ডেকে পাঠা।”

হারাণী বলিল, “এখন অসময়ে আসিবেন কি? আমি ডাকিয়া পাঠাই বা কি করিয়া?”

সুভাষিণী ভ্রূভঙ্গ করিল, “যেমন করে পারিস—ডাক গে যা।”

হারাণী হাসিতে হাসিতে চলিয়া গেল। আমি সুভাষিণীকে জিজ্ঞাসা করিলাম, “ডাকিতে পাঠাইলে কাকে? তোমার স্বামীকে?”

সু। না ত কি পাড়ার মুদি মিন্ি‍সেকে এই রাত্রে ডাকিতে পাঠাইব?

আমি বলিলাম, “বলি, আমায় উঠিয়া যাইতে হইবে কি না, তাই জিজ্ঞাসা করিতেছিলাম।”

সুভাষিণী বলিল, “না। এইখানে বসিয়া থাক।”

সুভাষিণীর স্বামী আসিলেন। বেশ সুন্দর পুরুষ। তিনি আসিয়াই বলিলেন, “তলব কেন?” তার পর আমাকে দেখিয়া বলিলেন, “ইনি কে?”

সুভাষিণী বলিল, “ওঁর জন্যই তোমাকে ডেকেছি। আমাদের রাঁধুনী বাড়ী যাবে, তাই ওঁকে তার জায়গায় রাখিবার জন্য আমি মাসীর কাছ হইতে এনেছি। কিন্তু মা ওঁকে রাখিতে চান না।”

তাঁর স্বামী বলিলেন, “কেন চান না?”

সু। সমত্ত বয়স।

সুভার স্বামী একটু হাসিলেন। বলিলেন, “তা আমায় কি করিতে হইবে?”

সু। ওঁকে রাখিয়ে দিতে হইবে।

স্বামী। কেন?