গৃহিণী সম্বন্ধে সুভাষিণী লিখিল, “তিনি তোমার এইসকল সংবাদ পাইয়া আহ্লাদ প্রকাশ করিয়াছেন, কিন্তু আমাকে ও র-বাবুকে কিছু ভর্ৎসনাও করিয়াছেন। বলিয়াছেন, ‘সে যে এত বড় ঘরের মেয়ে, তা তোরা আমাকে আগে বলিস নে কেন? আমি তাকে খুব যত্নে রাখিতাম।’ আর, তোমার স্বামীরও কিছু নিন্দা করিয়াছেন, বলিয়াছেন, ‘হোক তাঁর পরিবার, আমার অমন রাঁধুনীটা নিয়ে যাওয়া তাঁর কিছু ভাল হয় নাই’|”

কর্তা রামরাম দত্তের কথা সুভাষিণীর নিজ হাতের হিজিবিজি। কষ্টে পড়িলাম যে, কর্তা গৃহিণীকে কৃত্রিম কোপের সহিত তিরস্কার করিয়া বলিয়াছিলেন, “তুমি ছলছুতা করিয়া সুন্দর রাঁধুনীটাকে বিদায় করিয়া দিয়াছ।” গৃহিণী বলিলেন, “খুব করিয়াছি, তুমি সুন্দরী নিয়ে কি ধুইয়া খাইতে?” কর্তা বলিলেন, “তা কি বলতে পারি। ও কালো রূপ আর রাত দিন ধ্যান করিতে পারা যায় না|” গৃহিণী সেই হইতে শয্যা লইলেন, আর সেদিন উঠিলেন না। কর্তা যে তাঁহাকে ক্ষেপাইয়াছেন, তাহা তিনি কিছুতেই বুঝিলেন না।

বলা বাহুল্য যে, ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী ও অন্যান্য ভৃত্যবর্গের জন্য কিছু কিছু পাঠাইয়া দিলাম।

তার পর সুভাষিণীর সঙ্গে আর একবার মাত্র দেখা হইয়াছিল। তার কন্যার বিবাহের সময়ে বিশেষ অনুরোধে, স্বামী মহাশয় আমাকে লইয়া গিয়াছিলেন। সুভাষিণীর কন্যাকে অলঙ্কার দিয়া সাজাইলাম—গৃহিণীকে উপযুক্ত উপহার দিলাম—যে যাহার যোগ্য, তাহাকে সেইরূপ দান ও সম্ভাষণ করিলাম। কিন্তু দেখিলাম, গৃহিণী আমার প্রতি ও আমার স্বামীর প্রতি অপ্রসন্ন। তাঁর ছেলের ভাল খাওয়া হয় না, কথাটা আমায় অনেকবার শুনাইলেন। আমিও রমণ বাবুকে কিছু রাঁধিয়া খাওয়াইলাম। কিন্তু আর কখন গেলাম না। রাঁধিবার ভয়ে নয়; গৃহিণীর মনোদু:খের ভয়ে।

গৃহিণী ও রামরাম দত্ত অনেক দিন হইল স্বর্গারোহণ করিয়াছেন। কিন্তু আর যাওয়া ঘটে নাই। আমি সুভাষিণীকে ভুলি নাই। ইহজন্মে ভুলিব না। সুভাষিণীর মত এ সংসারে আর কিছু দেখিলাম না।