চৌপদী
যাও যাও সুধাকর,    কেন হে বিলম্ব কর,
একবার শশধর,       যাও যাও যাও রে।
প্রাণের প্রেয়সী পাশে,  বল গিয়ে যদি আসে,
ধরিব পরাণ পাশে,    বধিও না তাও রে ||
নহে রহে এই স্থলে,   অহরহ কোন ছলে,
যেও না হে অস্তাচলে,  এই ভিক্ষা দাও রে।
মোহিনীর মুখ তোরে,  জ্ঞান করি প্রেম ডোরে,
বাঁধিয়া বাঁচাব মোরে,   যেও না কোথাও রে ||
মনে হয় সে রজনী,     যখন রমণী মণি,
অধরে অধরে ধনী,     ধরিল আমায় রে।
সে কি এই নদী তীরে,  এই সে নিকুঞ্জ কি রে,
তোরি তরে কলঙ্কী রে, দেখেছি কি তায় রে |‎|
হা নিকুঞ্জ মনোহর,     হা মধুর শশধর,
হে তটিনী স্থিরতর,    ধরি সবে পায় রে ||
ফিরে দেখা একবার,   মোহিনী মধুরাকার,
একবার দেখা আর,    হৃদি ফেটে যায় রে ||
ফিরে দরশন কর,     তটিনীর তটোপরি,
চম্পকের শাখা ধরি,   আমা পানে চায় রে।
কি শুনি কি শুনি মরি, মোহন স্বরেতে করি,
কে রে মোর নাম ধরি, ডাকিল কোথায় রে ||
বুঝি মোর প্রাণেশ্বরী,   এহো অনুগতে স্মরি,
রাখি গে হৃদয়োপরি,    আঁখি আঁখি করি রে।
না রে মিছে কেন আর, স্বপ্ন দেখে বারে বারে,
মজি সুখে মিছে কার,   যাতনায় মরি রে ||
নাহিক কপাল তার,      প্রাণেশ্বরী পাইবার,
এত আশা অভাগার,     সম্বরি সম্বরি রে।
যত সুখ আশা আর,     সব করি পরিহার,
শেষ আসা আশা সার,    তা কিসে পাসরি রে ||
যদিও জানি রে মনে,     পাইব না প্রিয়জনে,
গোপনেতে প্রাণপণে,      তবু আশা ধরি রে।
যদ্যপি স্বপ্নে বা ভ্রমে,     ছায়া সুখে কোন ক্রমে,
পাই যদি প্রিয়তমে,     হৃদয় ভিতরি রে ||
দারুণ বিধির বিধি         চেতনে হরিল নিধি,
জ্বালা জ্বালাইল বিধি,      মরি মরি মরি রে।
কিন্তু আশা পাছে আছে,   তাই চাঁদ তোর কাছে,
যেতে বলি যথা আছে,      আমার সুন্দরী রে ||
         -‘সংবাদ প্রভাকর’, ৩০ মার্চ্চ, ১৮৫৩