কোথায় মন্মথ গেল, তরি কোন্ ভিতে।
রজনী গভীরা তবু ভয় নাই চিতে।
এমন সময়ে শোনে সঙ্গীতের ধ্বনি।
মন্মথ গাইছে গীত বুঝিল অমনি ||
বুঝিল সঙ্কেত করে সেই প্রিয়জন,
নদীতীরে চন্দ্রালোকে বসিল তখন।
তীরেতে লাগিল তরি অতিদ্রুত হয়ে।
দেখিতে দেখিতে দুয়ে দুয়ের হৃদয়ে ||
কতই আদর করে, পেয়ে সোহাগিনী।
কতই রোদন করে কাতরা কামিনী ||
তখন ললিতা কয়,       “আর জ্বালা নাহি সয়,
       পড়িয়া দস্যুর হাতে, যে দুঃখ হে পেয়েছি।
কাড়ি নিল অলঙ্কার,         লাঞ্ছনা কত আমার,
       তীরে তীরে কেঁদে কেঁদে এতদূর এয়েছি ||
দেখা হবে তব সাথ,       হেন নাহি জানি নাথ,
       দয়া করি কালী আজি রেখেছেন চরণে।”
পতি বলে “শুন প্রিয়ে,     তোমা ধনে হারাইয়ে,
       মরিব বলিয়ে আজি, প্রবেশিনু কাননে ||
দেখিলাম দুই ধার,           মহারণ্যে অন্ধকার,
       নীরবে নির্ম্মলা নদী, তার মাঝে বহিছে।
ভীষণ বিজন স্তব্ধ,        নাহি জীব নাহি শব্দ,
       তরুদলে ঢুলে জলে, ঘুমাইয়া রহিছে ||
যে স্থির অরণ্য নদী,       যেন বা সৃজনাবধি,
       কোন জীব কোন কীট, তথা নাহি নড়েছে।
প্রথমে যে ছিল যথা,       এখনও রয়েছে তথা,
       মৃত্যুর ভীষণ ছায়া, সর্ব্বস্থানে পড়েছে ||
ভয়েতে গগন পানে,      চাহিলে ভুলিনু প্রাণে,
       বিমল সুনীলকাশে, শশী হেসে যেতেছে।
ভাবিলাম  প্রকৃতির,           সকলি গভীর স্থির,
       শুধু এ হৃদয় কেন, এত দুঃখ পেতেছে!
মরি যদি পারিতাম,          গোলে জল হইতাম,
       এ স্থির সলিলে মিশে, হৃদয় ঘুমাইত।
তথা রিপু চিন্তাহীন,            রহিতাম চিরদিন,
       ললিতার দুঃখ তবে, কিসে হৃদে আইত ||