আবার সেই ভগবদ্বাক্য স্মরণ কর “নির্ম্মমো নিরহঙ্কার” ইত্যাদি।* ইহাই নিরহঙ্কার। ভক্ত জানে যে, সকলই ঈশ্বর করিতেছেন, এই জন্য ভক্ত নিরহঙ্কার।

হস্তী হইতে প্রহ্লাদের কিছু হইল না দেখিয়া হিরণ্যকশিপু আগুনে পোড়াইতে আদেশ করিলেন। প্রহ্লাদ আগুনেও পুড়িল না। প্রহ্লাদ “শীতোষ্ণসুখদুঃখেষু সমঃ,” তাই প্রহ্লাদের সে আগুন পদ্মপত্রের ন্যায় শীতল বোধ হইল।# তখন দৈত্যপুরোহিত ভার্গবেরা দৈত্যপতিকে বলিলেন যে, “ইহাকে আপনি ক্ষমা করিয়া আমাদের জিম্মা করিয়া দিন। তাহাতেও যদি এ বিষ্ণুভক্তি পরিত্যাগ না করে, তবে আমারা অভিচারের দ্বারা ইহাকে বধ করিব। আমাদের কৃত অভিচার কখন বিফল হয় না।”

দৈত্যেশ্বর এই কথায় সম্মত হইলে, ভার্গবেরা প্রহ্লাদকে লইয়া গিয়া, অন্যান্য দৈত্যগণের সঙ্গে পড়াইতে লাগিলেন। প্রহ্লাদ সেখানে নিজে একটি ক্লাস খুলিয়া বসিলেন। এবং দৈত্যপুত্রগণকে একত্রিত করিয়া তাহাদিগকে বিষ্ণুভক্তিতে উপদেশ দিতে লাগিলেন। প্রহ্লাদের বিষ্ণুভক্তি আর কিছুই নহে-পরহিতব্রত মাত্র-

বিস্তারঃ সর্ব্বভূতস্য বিষ্ণোর্ব্বিশ্বমিদং জগৎ।

দ্রষ্টব্যমাত্মবৎ তস্মাদভেদেন বিচক্ষণৈঃ ||

  *           *

সর্ব্বত্র দৈত্যাঃ সমতামুপেত

সমত্বমারাধনমচ্যুতস্য ||

অর্থাৎ বিশ্ব, জগৎ, সর্ব্বভূত, বিষ্ণুর বিস্তার মাত্র; বিচক্ষণ ব্যক্তি এই জন্য সকলকে আপনার সঙ্গে অভেদ দেখিবেন।   *  *  হে দৈত্যগণ! তোমরা সর্ব্বত্র সমান দেখিও, এই সমত্ব (আপনার সঙ্গে সর্ব্বভূতের) ঈশ্বরের আরাধনা।

প্রহ্লাদের উক্তি বিষ্ণুপুরাণ হইতে তোমাকে পড়িতে অনুরোধ করি। এখন কেবল আর দুইটি শ্লোক শুন।

অথ ভদ্রাণি ভূতানি হীনশক্তিরহং পরম্।

তথাপি কুর্ব্বীত হানির্দ্বেষফলং যতঃ ||

বদ্ধবৈরাণি ভূতানি দ্বেষং কুর্ব্বন্তি চেত্ততঃ।

শোচ্যান্যহোহতিমোহেন ব্যাপ্তানীতি মনীষিণা ||

“অন্যের মঙ্গল হইতেছে, আপনি হীনশক্তি, ইহা দেখিয়াও আহ্লাদ করিও, দ্বেষ করিও না; কেন না, দ্বেষে অনিষ্টই হইয়া থাকে। যাহাদের সঙ্গে শত্রুতা বদ্ধ হইয়াছে, তাহাদেরও যে দ্বেষ করে, সে অতি মোহেতে ব্যাপ্ত হইয়াছে বলিয়া জ্ঞানীরা দুঃখ করেন।”

এখন সেই ভগবদুক্ত লক্ষণ মনে কর।

“যস্মান্নোদ্বিজতে লোকো লোকান্নোদ্বিজতে চ যঃ” এবং ‘ন দ্বেষ্টি’’! শব্দ মনে কর। ভগবদ্বাক্যে পুরাণকর্ত্তার কৃত এই টীকা।

* নির্ম্মমো নিরহঙ্কার: সমদু:খসুখ: ক্ষমী।
# শীতোষ্ণসুখদু:খেষু সম: সঙ্গবিবর্জ্জিত ||
! যো ন হৃষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি।