হন্তি রক্ষতি চৈবাত্মা হ্যসৎ সাধু সমারণ্ ||
 বিষ্ণুপুরাণ।১।১৮।২৯
যে ইহাকে অবিনাশী, নিত্য, অজ এবং অব্যয় বলিয়া জানে, হে পার্থ, সে পুরুষ কাহাকে মারে? কাহাকেই বা হনন করায়?।২১।
ভাবার্থ-যে জানে যে, দেহ নাশ হইলেই শরীরীর বিনাশ হইল না, সে যদি কাহারও দেহধ্বংসের কারণ হয়, তবে তাহার উচিত নহে যে, সে “আমি ইহার বিনাশের কারণ হইলাম” বলিয়া দুঃখিত হয়। কেন না আত্মা অবিনাশী। শরীরের বিনাশে তাহার বিনাশ হইল না।
তবে যদি বল যে, “ভাল, আত্মার বিনাশ না হউক, কিন্তু শরীরের ত বিনাশ আছেই। শরীরনাশেরই বা আমি কেন কারণ হই?” তাহার উত্তর পরশ্লোকে কথিত হইতেছে।
নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণা-
ন্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী || ২২ ||
যেমন মনুষ্য জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া অপর নূতন বস্ত্র48 গ্রহণ করে, তেমনি আত্মা পুরাতন শরীর পরিত্যাগ করিয়া নূতন শরীরে সংগত হয়।২২।
অর্থাৎ যেমন তোমার জীর্ণ বস্ত্র কেহ ছিঁড়িয়া বা না দিক, তোমাকে জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করিয়া নূতন বস্ত্র গ্রহণ করিতেই হইবে, তেমনি তুমি যুদ্ধ কর বা না কর, যোদ্ধৃগণ অবশ্য দেহত্যাগ করিবে, তোমার যুদ্ধবিরতিতে তাহাদের দেহনাশ নিবারণ হইবে না। তবে কেন যুদ্ধ করিবে না?
স্মরণ রাখা কর্ত্তব্য যে, যে ব্যক্তি বধকার্য্য করিতে হইবে বলিয়া শোকমোহপ্রযুক্ত ধর্ম্মযুদ্ধ হইতে বিমুখ হয়, তাহার প্রতি এই সকল বাক্য প্রযোজ্য। নচেৎ আত্মা অবিনশ্বর এবং দেহমাত্র নশ্বর, ইহার এমন অর্থ নহে যে, কেহ কাহাকে খুন করিলে তাহাতে দোষ নাই। খুন করিলে দোষ আছে কি না আছে-সে বিচারের সঙ্গে এ বিচারের কোন সম্বন্ধই নাই-থাকিতেও পারে না। এখানে বিবেচ্য, ধর্ম্মযুদ্ধে শোকমোহের কোন কারণ আছে কি না? উত্তর-কারণ নাই, কেন না, আত্মা অবিনশ্বর, আর দেহ নশ্বর। দেহী কেবল নূতন কাপড় পরিবে মাত্র-তাহাতে কাঁদাকাটার কথাটা কি?
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ || ২৩ ||
এই (আত্মা) অস্ত্রে কাটে না, আগুনে পুড়ে না, জলে ভিজে না, এবং বাতাসে শুকায় না।২৩। আত্মা নিরবয়ব, এই জন্য অস্ত্রাদির অতীত।
নিত্যঃ সর্ব্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ।
অব্যক্তোহয়মচিন্ত্যোহয়মবিকার্যোহয়মুচ্যতে || ২৪ ||
ইনি ছেদনীয় নহেন, দহনীয় ক্লেদনীয় নহেন এবং শোষণীয় নহেন। (ইনি) নিত্য, সর্ব্বগত, স্থাণু, অচল, সনাতন, অব্যক্ত, অচিন্ত্য অবিকার্য্য বলিয়া কথিত হন।২৪।
স্থাণু-অর্থাৎ স্থিরস্বভাব। অচল-পূর্ব্বরূপ অপরিত্যাগী। সনাতন-চিরন্তন, অনাদি। অব্যক্ত-চক্ষুরাদি জ্ঞানেন্দ্রিয়ের অবিষয়। অচিন্ত্য-মনের অবিষয়। অবিকার্য্য অচল-কর্ম্মেন্দ্রিয়ের অবিষয়।
যে কয়টা কথা ইটালিক অক্ষরে লিখিলাম, পাঠক তৎপ্রতি অনুধাবন করিবেন, গীতার কথাটা বেশ বুঝা যাইবে।





