“হে কংসদাসতনয়! ধনঞ্জয় তোমার বাক্যানুসারে বৃকোদরকে আমার ঊরু ভগ্ন করিতে সঙ্কেত করাতে ভীমসেন অধর্মযুদ্ধে আমারে নিপাতিত করিয়াছে, ইহাতে তুমি লজ্জিত হইতেছ না। তোমার অন্যায় উপায় দ্বারাই প্রতিদিন ধর্মযুদ্ধে প্রবৃত্ত সহস্র নরপতি নিহত হইয়াছেন।* তুমি শিখণ্ডীরে অগ্রসর করিয়া পিতামহকে নিপাতিত করিয়াছ।# অশ্বত্থামা নামে গজ নিহত হইলে তুমি কৌশলেই আচার্যকে অস্ত্রশস্ত্র পরিত্যাগ করাইয়াছিলে এবং সেই অবসরে দুরাত্মা ধৃষ্টদুম্ন সমক্ষে আচার্যকে নিহত করিতে উদ্যত হইলে তাহাকে নিষেধ কর নাই।** কর্ণ অর্জুনের বিনাশার্থ বহুদিন অতি যত্নসহকারে যে শক্তি রাখিয়াছিলেন, তুমি কৌশলক্রমে সেই শক্তি ঘটোৎকচের উপর নিক্ষেপ করাইয়া, ব্যর্থ করাইয়াছ।## সাত্যকি তোমারই প্রবর্তনাপরতন্ত্র হইয়া ছিন্নহস্ত প্রায়োপবিষ্ট ভূরিশ্রবারে নিহত করিয়াছিলেন।! মহাবীর কর্ণ অর্জুনবধে সমুদ্যত হইলে, তুমি কৌশলক্রমে তাহার সর্পবাণ ব্যর্থ করিয়াছ।!! এবং পরিশেষে সূতপুত্রের রথচক্র ভূগর্ভে প্রবিষ্ট ও তিনি চক্রোদ্ধারের নিমিত্ত ব্যস্তসমস্ত হইলে তুমি কৌশলক্রমে অর্জুন দ্বারা তাঁহার বিনাশ সাধনে কৃতকার্য হইয়াছ।*** অতএব তোমার তুল্য পাপাত্মা, নির্দয় ও নির্লজ্জ আর কে আছে? দেখ, তোমরা যদি ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ ও আমার সহিত ন্যায়যুদ্ধ করিতে, তাহা হইলে কদাপি জয়লাভে সমর্থ হইতে না। তোমার অনার্য উপায় প্রভাবেই আমরা স্বধর্মানুগত পার্থিবগণের সহিত নিহত হইলাম।”

এই বাক্যপরম্পরা সম্বন্ধে আমি যে কয়েকটি ফুটনোট দিলাম, পাঠকের তৎপ্রতি মনোযোগ করিতে হইবে। বাক্যগুলি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এরূপ সম্পূর্ণ মিথ্যা তিরস্কার মহাভারতে আর কোথাও নাই। তাহাই বলিতেছিলাম যে, দুর্যোধনের উত্তর আশ্চর্য।

তৃতীয় আশ্চর্য ব্যাপার এই যে কৃষ্ণ ইহার উত্তর করিলেন। পূর্বে দেখিয়াছি, তিনি গম্ভীরপ্রকৃতি ও ক্ষমাশীল, কাহার কৃত তিরস্কারের উত্তর করেন না। সভামধ্যে শিশুপালকৃত অসহ্য নিন্দাবাদ বিনাবাক্যব্যয়ে সহ্য করিয়াছিলেন। বিশেষ, দুর্যোধন এখন মুমূর্ষু তাহার কথার উত্তরের কোন প্রয়োজন নাই; তাহাকে কোন প্রকারে কটূক্তি করা কৃষ্ণ নিজেই নিন্দনীয় বিবেচনা করেন। তথাপি কৃষ্ণ দুর্যোধনকৃত তিরস্কারের উত্তরও করিলেন, এবং কটূক্তিও করিলেন। উত্তরে দুর্যোধনকৃত পাপাচার সকল বিবৃত করিয়া উপসংহারে বলিলেন, “বিস্তর অকার্যের অনুষ্ঠান করিয়াছ। এক্ষণে তাহার ফলভোগ কর।”

* এরূপ বিবেচনা করিবার কারণ মহাভারতে কোথাও নাই। কোন স্তরেই না।
# কৃষ্ণ ইহার বিন্দুবিসর্গেও ছিলেন না। মহাভারতে কোথাও এমন কথা নাই।
** শত্রুকে বধ করিতে কেন নিষেধ করিবেন?
## কৃষ্ণ তজ্জন্য কোন যত্ন বা কৌশল করেন নাই। মহাভারতে ইহাই আছে যে, কৌরবগণের অনুরোধানুসারেই কর্ণ ঘটোৎকচের প্রতি শক্তি প্রয়োগ করিলেন।
! কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এমন কথা মহাভারতে কোথাও নাই। সাত্যকি ভূরিশ্রবাকে নিহত করিয়াছিলেন বটে। কৃষ্ণ বরং ছিন্নবাহু ভূরিশ্রবাকে নিহত করিতে নিষেধ করিয়াছিলেন।
!! সে কৌশল, নিজপদবলে রথচক্র ভূপ্রোথিত করা। এ উপায় অতি ন্যায্য এবং সারথির ধর্ম, রথীর রক্ষা।
*** কি কৌশল? মহাভারতে এ সম্বন্ধে কৃষ্ণকৃত কোন কৌশলের কথা নাই। যুদ্ধে অর্জুন কর্ণকে নিহত করিয়াছিলেন, ইহাই আছে।