নবম পরিচ্ছেদ

ব্রজেশ্বর আপনার নৌকায় আসিয়া গম্ভীর হইয়া বসিল। সাগরের সঙ্গে কথা কহে না। দেখিল, দেবীর বজরা পাল তুলিয়া পক্ষিণীর মত উড়িয়া গেল। তখন ব্রজেশ্বর সাগরকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বজরা কোথায় গেল?”

সাগর বলিল, “তা দেবী ভিন্ন আর কেহ জানে না। সে সকল কথা দেবী আর কাহাকেও বলে না।”

ব্র। দেবী কে?

সা। দেবী দেবী।

ব্র। তোমার কে হয়?

সা। ভগিনী।

ব্র। কি রকম ভগিনী?

সা। জ্ঞাতি।

ব্রজেশ্বর আবার চুপ করিল। মাঝিদিগকে ডাকিয়া বলিল, “তোমরা বড় বজরার সঙ্গে যাইতে পার?” মাঝিরা বলিল, “সাধ্য কি! ও নক্ষত্রের মত ছুটিয়াছে।” ব্রজেশ্বর আবার চুপ করিল। সাগর ঘুমাইয়া পড়িল।

প্রভাত হইল, ব্রজেশ্বর বজরা খুলিয়া চলিল।

সূর্যোদয় হইলে সাগর আসিয়া ব্রজেশ্বরের কাছে বসিল। ব্রজেশ্বর জিজ্ঞাসা করিল, “দেবী কি ডাকাতি করে?”

সা। তোমার কি বোধ হয়?

ব্র। ডাকাতির সমান ত সব দেখিলাম–ডাকাতি করিলে করিতে পারে, তাও দেখিলাম। তবু বিশ্বাস হয় না যে, ডাকাতি করে।

সা। তবু কেন বিশ্বাস হয় না?

ব্র। কে জানে। ডাকাতি না করিলেই বা এত ধন কোথায় পাইল?

সা। কেহ বলে, দেবী দেবতার বরে এত ধন পাইয়াছে; কেহ বলে, মাটির ভিতর পোঁতা টাকা পাইয়াছে; কেহ বলে, দেবী সোণা করিতে জানে।

ব্র। দেবী কি বলে?

সা। দেবী বলে, এক কড়াও আমার নয়, সব পরের।

ব্র। পরের ধন এত পাইল কোথায়?

সা। তা কি জানি।

ব্র। পরের ধন হলে অত আমিরি করে? পরে কিছু বলে না?