ব্র। না।

পাঁচ। কাঠ কাটিতে জান?

ব্র। না।

পাঁচ। বাজার করিতে জান?

ব্র। মোটামুটি রকম।

পাঁচ। মোটামুটিতে চলিবে না। বাতাস করিতে জান?

ব্র। পারি।

পাঁচ। আচ্ছা, এই চামর নাও, বাতাস কর।

ব্রজেশ্বর চামর লইয়া বাতাস করিতে লাগিল। পাঁচকড়ি বলিল, “আচ্ছা, একটা কাজ জান? পা টিপিতে জান?”

ব্রজেশ্বরের দুরদৃষ্ট, তিনি পাঁচকড়িকে মুখরা দেখিয়া, একটি ছোট রকমের রসিকতা করিতে গেলেন। এই দস্যুনেত্রীদিগের কোন রকমে খুসি করিয়া মুক্তিলাভ করেন, সে অভিপ্রায়ও ছিল। অতএব পাঁচকড়ির কথার উত্তরে বলিলেন, “তোমাদের মত সুন্দরীর পা টিপিব, সে ত ভাগ্য_”

“তবে একবার টেপ না” বলিয়া অমনি পাঁচকড়ি আলতাদপরা রাঙ্গা পাখানি ব্রজেশ্বরের ঊরুর উপর তুলিয়া দিল।

ব্রজেশ্বর নাচার–আপনি পা টেপার নিমন্ত্রণ লইয়াছেন, কি করেন। ব্রজেশ্বর কাজেই দুই হাতে পা টিপিতে আরম্ভ করিলেন। মনে করিলেন, “এ কাজটা ভাল হইতেছে না, ইহার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে। এখন উদ্ধার পেলে বাঁচি।”

তখন দুষ্টা পাঁচকড়ি ডাকিল “রাণীজি! একবার এদিকে আসুন।”

দেবী আসিতেছে, ব্রজেশ্বর পায়ের শব্দ পাইল। পা নামাইয়া দিল। পাঁচকড়ি হাসিয়া বলিল, “সে কি? পিছাও কেন?” পাঁচকড়ি সহজ গলায় কথা কহিয়াছিল। ব্রজেশ্বর বড় বিস্মিত হইলেন–“সে কি? এ গলা ত চেনা গলাই বটে।” সাহস করিয়া ব্রজেশ্বর পাঁচকড়ির মুখঢাকা রুমালখানা খুলিয়া লইলেন। পাঁচকড়ি খিল্ খিল্ করিয়া হাসিয়া উঠিল।

ব্রজেশ্বর বিস্মিত হইয়া বলিল, “সে কি? এ কি? তুমি–তুমি সাগর?”

পাঁচকড়ি বলিল, “আমি সাগর। গঙ্গা নই–যমুনা নই–বিল নই–খাল নই–সাক্ষাৎ সাগর। তোমার বড় অভাগ্য–না? যখন পরের স্ত্রী মনে করিয়াছিলে, তখন বড় আহ্লাদ করিয়া পা টিপিতেছিলে, আর যখন ঘরের স্ত্রী হইয়া পা টিপিতে বলিয়াছিলাম, তখন রাগে গর্গহর্ করিয়া চলিয়া গেলে। যাক, এখন আমার প্রতিজ্ঞা রক্ষা হইয়াছে। তুমি আমার পা টিপিয়াছ। এখন আমার মুখপানে চাহিয়া দেখিতে পার, আমায় ত্যাগ কর, আর পায়ে রাখ–এখন জানিলে, আমি যথার্থ ব্রাহ্মণের মেয়ে।”