সুন্দরী। তবে বসো–কেমন রাঁধিতে জান, পরিচয় দাও।

ব্রজেশ্বর তখন সেই কোমল গালিচার উপর বসিল। সুন্দরী জিজ্ঞাসা করিল, “তোমার নাম কি?”

ব্র। তা ত তোমরা সকলেই জান, দেখিতেছি। আমার নাম ব্রজেশ্বর। তোমার নাম কি? গলা অত মোটা করিয়া কথা কহিতেছ কেন? তুমি কি চেনা মানুষ?

সুন্দরী। আমি তোমার মুনিব–আমাকে ‘আপুনি’ ‘মশাই’ আর ‘আজ্ঞে’ বলিবে।

ব্র। আজ্ঞে, তাই হইবে। আপনার নাম?

সুন্দরী। আমার নাম পাঁচকড়ি। কিন্তু তুমি আমার ভৃত্য, আমার নাম ধরিতে পারিবে না। বরং বল ত আমিও তোমার নাম ধরিব না।

ব্র। তবে কি বলিয়া ডাকিলে আমি ‘আজ্ঞা’ বলিব?

পাঁচ। আমি ‘রামধন’ বলিয়া তোমাকে ডাকিব। তুমি আমাকে ‘মুনিব ঠাকুরুণ’ বলিও। এখন তোমার পরিচয় দাও–বাড়ী কোথায়?

ব্র। এক কড়ায় কিনিয়াছ–অত পরিচয়ের প্রয়োজন কি?

পাঁচ। ভাল, সে কথা নাই বলিলে। রঙ্গরাজকে জিজ্ঞাসা করিলে জানিতে পারিব। রাঢ়ী, না বারেন্দ্র, না বৈদিক?

ব্র। হাতের ভাত ত খাইবেন–যাই হই না।

পাঁচ। তুমি যদি আমার স্বশ্রেণী না হও–তাহা হইলে তোমাকে অন্য কাজ দিব।

ব্র। অন্য কি কাজ?

পাঁচ। জল তুলিবে, কাঠ কাটিবে–কাজের অভাব কি!

ব্র। আমি রাঢ়ী।

পাঁচ। তবে তোমায় জল তুলিতে, কাঠ কাটিতে হইবে–আমি বারেন্দ্র। তুমি রাঢ়ী–কুলীন, না বংশজ?

ব্র। এ কথা ত বিবাহের সম্বন্ধের জন্যই প্রয়োজন হয়। সম্বন্ধ জুটিবে কি? আমি কৃতদার।

পাঁচ। কৃতদার? কয় সংসার করিয়াছেন?

ব্র। জল তুলিতে হয়–জল তুলিব–অত পরিচয় দিব না।

তখন পাঁচকড়ি দেবী রাণীকে ডাকিয়া বলিল, “রাণীজি! বামুন ঠাকুর বড় অবাধ্য। কথার উত্তর দেয় না।”

নিশি অপর কক্ষ হইতে উত্তর করিল, “বেত লাগাও।”

তখন দেবীর একজন পরিচারিকা সপাং করিয়া একগাছা লিকলিকে সরু বেত পাঁচকড়ির বিছানায় ফেলিয়া দিয়া চলিয়া গেল। পাঁচকড়ি বেত পাইয়া ঢাকাই রুমালের ভিতর মধুর অধর চারু দন্তে টিপিয়া বিছানায় বার দুই বেতগাছা আছড়াইল। ব্রজেশ্বরকে বলিল, “দেখিয়াছ?”

ব্রজেশ্বর হাসিল। বলিল, “আপনারা সব পারেন। কি বলিতে হইবে বলিতেছি।”

পাঁচ। তোমার পরিচয় চাই না–পরিচয় লইয়া কি হইবে? তোমার রান্না ত খাইব না। তুমি আর কি কাজ করিতে পার, বল?

ব্র। হুকুম করুন।

পাঁচ। জল তুলিতে জান?