হেমচন্দ্র বাষ্পাকুললোচনে গদ্গদস্বরে গিরিজায়াকে কহিলেন, “এ আমারই মৃণালিনী। তুমি তাহাকে কোথায় দেখিলে?

গি।

দেখিলাম সরোবরে, কাঁপিছে পবনভরে,

মৃণাল উপরে মৃণালিনী।

হে। এখন রূপক রাখ, আমার কথার উত্তর দাও- কোথায় মৃণালিনী?

গি। এই নগরে।

হেমচন্দ্র রুষ্টভাবে কহিলেন, “তা ত আমি অনেক দিন জানি। এ নগরে কোন্ স্থানে?”

গি। হৃষীকেশ শর্মার বাড়ী।

হে। কি পাপ! সে কথা আমিই তোমাকে বলিয়া দিয়াছিলাম। এতদিন ত তাহার সন্ধান করিতে পার নাই, এখন কি সন্ধান করিয়াছ?

গি। সন্ধান করিয়াছি।

হেমচন্দ্র দুই বিন্দু- দুই বিন্দু মাত্র অশ্রুমোচন করিলেন। পুনরপি কহিলেন, “সে এখান হইতে কত দূর?

গি। অনেক দূর।

হে। এখান হইতে কোন্ দিকে যাইতে হয়?

গি। এখান হইতে দক্ষিণ, তার পর পূর্ব, তার পর উত্তর, তার পর পশ্চিম-

হেমচন্দ্র হস্ত মুষ্টিবদ্ধ করিলেন। কহিলেন, “এ সময়ে তামাসা রাখ-নহিলে মাথা ভাঙ্গিয়া ফেলিব |”

গি। শান্ত হউন। পথ বলিয়া দিলে কি আপনি চিনিতে পারিবেন? যদি তা না পারিবেন, তবে জিজ্ঞাসার প্রয়োজন? আজ্ঞা করিলে আমি সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইব।

মেঘমুক্ত সূর্যের ন্যায় হেমচন্দ্রের মুখ প্রফুল্ল হইল। তিনি কহিলেন, “তোমার সর্বকামনা সিদ্ধ হউক-মৃণালিনী কি বলিল?”

গি। তা ত বলিয়াছি-

“ডুবিয়া অতল জলে মৃণালিনী মরে |”

হে। মৃণালিনী কেমন আছে?

গি। দেখিলাম শরীরে কোন পীড়া নাই।

হে। সুখে আছে কি ক্লেশে আছে- কি বুঝিলে?

গি। শরীরে গহনা, পরণে ভাল কাপড়- হৃষীকেশ ব্রাহ্মণের কন্যা সই।

হে। তুমি অধ:পাতে যাও; মনের কথা কিছু বুঝিলে?

গি। বর্ষাকালের পদ্মের মত; মুখখানি কেবল জলে ভাসিতেছে।

হে। পরগৃহে কি ভাবে আছে?

গি। এই অশোক ফুলের স্তবকের মত। আপনার গৌরবে আপনি নম্র।

হে। গিরিজায়া! তুমি বয়সে বালিকা মাত্র। তোমার ন্যায় বালিকা আর দেখি নাই।

গি। মাথা ভাঙ্গিবার উপযুক্ত পাত্রও এমন আর দেখেন নাই।

হে। সে অপরাধ লইও না, মৃণালিনী আর কি বলিল?

গি। যো দিন জানকী-