রা। গল্প কথা নয় ত?

শ্যা। এ কি আর গল্প কথা!

রা। কি জানি। হয় ত ডাকিনীটা মড়া ফড়া খাবার জন্য রাত্রিতে কোথা বেরিয়ে গিয়েছিল, আর আসে নি। এখন রাজার পীড়াপীড়িতে তারা আপনার বাঁচন জন্য একটা রচে-মচে বলচে।

শ্যা। এ কি আর রচা কথা? তারা দেখেছে যে, সেটার এমন এমন মূলোর মত দাঁত, শোণের মত চুল, বারকোশের মত চোখ, একটা আস্ত কুমীরের মত জিব, দুটো জালার মত দুটো স্তন, মেঘগর্জনের মত নিশ্বাস, আর ডাকেতে একেবারে মেদিনী বিদীর্ণ!

রা। সর্বনাশ! এ ত বড় অদ্ভুত ব্যাপার! রাজার মতিচ্ছন্ন ধরেছে বলছিলে কি?

শ্যা। তাই বল‍‍চি শোন না। এই ত গেল নিরপরাধী বেচারাদের নাহক কয়েদ। তার পর, সেই ডাকিনীটাকে খুঁজে ধরে আনবার জন্য রাজা ত দিক‍‍বিদিকে কত লোকই পাঠাচ্চেন। এখন সে আপানার স্বস্থানে চলে গেছে, মনুষ্যের সাধ্য কি, তাকে সন্ধান ক’রে ধ’রে আনে। কেউ ত পারচে না—সবাই এসে জোড় হাত ক’রে এত্তেলা করছে যে, সন্ধান করতে পারলে না।

রা। তাতে রাজা কি বলেন?

শ্যা। এখন যাই কেউ ফিরে এসে বলচে যে, সন্ধান পেলে না, অমনই রাজা তাকে কয়েদে পাঠাচ্চেন। এই করে ত হাবুজখানা পরিপূর্ণ। এ দিকে রাজপুরুষদের এমনই ভয় লেগেছে যে, বাড়ী, ঘর, দ্বার, স্ত্রী, পুত্র ছেড়ে পালাচ্ছে। দেখাদেখি নগরের প্রজা দোকানদারও সব পালাচ্চে।

রা। তা, দেবী কি করেন? তিনি কটাক্ষ করিলেই ত এই সকল নিরপরাধী লোক রক্ষা পায়।

শ্যা। তিনি সাক্ষাৎ ভগবতী! তিনি এই সকল ব্যাপার দেখিয়া ভৈরবীবেশে রাজাকে দর্শন দিয়া বলিলেন, “রাজা! নিরপরাধীর পীড়ন করিও না। নিরপরাধীর পীড়ন করিলে, রাজার রাজ্য থাকে না। এদের কোন দোষ নাই। আমিই সেটাকে তাড়াইয়াছি—কেন না, সেটা হ’তে তোমার রাজ্যের অমঙ্গল হতেছিল। দোষ হয়ে থাকে, আমারই হয়েছে। দণ্ড করিতে হয়, ওদের ছেড়ে দিয়ে আমারই দণ্ড কর।

রা। তার পর?

শ্যা। তাই বলছিলাম, রাজার বড় মতিচ্ছন্ন ধরেছে। সেটা পলায়ন অবধি রাজার মেজাজ এমন গরম যে, কাক পক্ষী কাছে যেতে পাচ্চে না। তর্কালঙ্কার ঠাকুর গিয়েছিলেন, বড় রাণী কাছে গিয়েছিলেন, গাল খেয়ে পালিয়ে এলেন।

রা। সে কি! গুরুকে গালি—গালাজ? নির্বংশ হবেন যে!

শ্যা। তার কি আর কথা আছে? তার পর শোন না। গরম মেজাজের প্রথম মোহড়াতেই সেই দেবতা গিয়া ঐ কথা বললেন। বলতেই রাজা চক্ষু আরক্ত করিয়া তাঁকে স্বহস্তে প্রহার করিতেই উদ্যত। তা না ক’রে, যা করেছে, সে ত আরও ভয়ানক!

রা। কি করেছে?

শ্যা। ঠাকুরাণীকে কয়েদ করেছে। আর হুকুম দিয়েছে যে, তিন দিনের মধ্যে ডাকিনীকে যদি না পাওয়া যায়, তবে সমস্ত রাজ্যের লোকের সমুখে (সেই দেবীকে) উলঙ্গ ক’রে চাঁড়ালের দ্বারা বেত মারিবে।

রা। হো! হো! হোহো! দেবতার আবার কি করিবে! রাজা কি পাগল হয়েছে! তা, মা কি কয়েদ গিয়েছেন না কি? তাঁকে কয়েদ করে কার বাপের সাধ্য?