সীতারাম
সপ্তদশ পরিচ্ছেদ
রা। ভয়ানক ব্যাপার! লোক অস্থির হ’য়ে উঠলো।
শ্যা। তাই ত দাদা। আর তিলার্ধ এ রাজ্যে থাকা নয়।
রা। তা তুমি ত আজ কত দিন ধ’রে যাই যাই ক’চ্ছো—যাও নি যে?
শ্যা। যাওয়ারই মধ্যে, মেয়ে ছেলে সব নলডাঙ্গা পাঠিয়ে দিয়েছি। তবে আমার কিছু লহনা পড়ে রয়েছে, সেগুলা যতদূর হয়, আদায় ওসুল ক’রে নিয়ে যাই। আর আদায় ওসুল বা করবো কার কাছে—দেনেওয়ালারাও সব ফেরার হয়েছে।
রা। আচ্ছা, এ আবার নূতন ব্যাপার কি? কেন এত হাঙ্গামা, তা কিছু জান? শুনেছি না কি, হাবুজখানায় আর কয়েদী ধরে না, নূতন চালাগুলাতেও ধরে না, এখন না কি গোহালের গোরু বাহির করিয়া কয়েদী রাখছে?
শ্যা। ব্যাপারটা কি জান না? সেই ডাকিনীটা পালিয়েছে।
রা। তা শুনেছি। আচ্ছা, সে ডাকিনীটা ত এত যাগ-যজ্ঞে কিছুতেই গেল না—এখন আপনি পালাল যে?
শ্যা। আপনি কি আর গিয়েছে? (চুপি চুপি) বল্তেজ গায়ে কাঁটা দেয়। সে নাকি দেবতার তাড়নায় গিয়েছে।
রা। সে কি?
শ্যা। এই নগরে এক দেবী অধিষ্ঠান করেন শুন নি? তিনি কখন কখন দেখা দেন— অনেকেই তাঁকে দেখেছে। কেন, যে দিন ছোট রাণীর পরীক্ষা হয়, সে দিন তুমি ছিলে না?
রা। হাঁ! হাঁ! সেই তিনিই! আচ্ছা, বল দেখি তিনি কে?
শ্যা। তা তিনি কি কারও কাছে আপনার পরিচয় দিতে গিয়েছেন! তবে পাঁচ জন লোকে পাঁচ রকম বলচে।
রা। কি বলে?
শ্যা। কেউ বলে, তিনি এই পুরীর রাজলক্ষ্মী; কেউ বলে, তিনি স্বয়ং লক্ষ্মীনারায়ণজিউর মন্দির হইতে কখনও কখনও রূপ ধারণ ক’রে বা’র হন, লোকে এমন দেখেছে। কেউ বলে,তিনি স্বয়ংদশভূজা; দশভূজার মন্দিরে গিয়া অন্তর্ধান হ’তে তাঁকে না কি দেখেছে।
রা। তাই হবে। নইলে তিনি ভৈরবীবেশে ধারণ করবেন কেন? সে সভায় ত তিনি ভৈরবীবেশে অধিষ্ঠান করেছিলেন?
শ্যা। তা যিনিই হ’ন, আমাদের অনেক ভাগ্য যে, আমরা তাঁকে সে দিন দর্শন করেছিলাম। কিন্তু রাজার এমনই মতিচ্ছন্ন ধরেছে যে—
রা। হাঁ-তার পর ডাকিনীটা গেল কি ক’রে শুনি।
শ্যা। সেই দেবী, ডাকিনী হ’তে রাজ্যের অমঙ্গল হ’চ্ছে দেখে, এক দিন ভৈরবীদেশে ত্রিশূল ধারণ ক’রে তাকে বধ করতে গেলেন।
রা। ইঃ! তার পর?
শ্যা। তার পর আর কি? মার রণরঙ্গিণী মূর্তি দেখে, সেটা তালগাছপ্রমাণ বিকটাকার মূর্তি ধারণ ক’রে ঘোর গর্জন করতে করতে কোথায় যে আকাশপথে উড়ে গেল, কেউ আর দেখতে পেলে না।
রা। কে বললে?
শ্যা। বললে আর কে? যারা দেখেছে, তারাই বলেছে। রাজা এমনই সেই ডাকিনীর মায়ায় বদ্ধ যে, সেটা গেছে ব’লে চিত্তবিশ্রামের যত দ্বারবান দাস—দাসী, সবাইকে ধরে এনে কয়েদ করেছেন। তারাই এই সব কথা প্রকাশ করেছে। তারা বলে, “মহারাজ! আমাদের অপরাধ কি? দেবতার কাছে আমরা কি করব?”