শ্যা। দেবচরিত্র কার সাধ্য বুঝে! রাজার না কি রাজ্যভোগের নির্দিষ্ট কাল ফুরিয়েছে, তাই মা ছল ধরিয়া, এখন স্বধামে গমনের চেষ্টায় আছেন। রাজা কয়েদের হুকুম দিলেন, মা স্বচ্ছন্দে গজেন্দ্রমনে কারাগারমধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলেন। শুনিতে পাই, রাত্রে কারাগারে মহাকোলাহল উপস্থিত হয়। যত দেবতারা আসিয়া স্তব পাঠ করেন—ঋষিরা আসিয়া বেদ পাঠ, মন্ত্র পাঠ করেন। পাহারাওয়ালা বাহির হইতে শুনিতে পায়, কিন্তু দ্বার খুলিলেই সব অন্তর্ধান হয়। (বলা বাহুল্য যে, জয়ন্তী নিজেই নিজেই রাত্রিকালে ঈশ্বরস্তোত্র পাঠ করেন। পাহারাওয়ালারা তাহাই শুনিতে পায়।)

রাম। তার পর?

শ্যাম। তার পর এখন আজ সে তিন দিন পুরিল। রাজা ঢেঁট্য়‍রা দিয়েছেন যে, কাল এক মাগী চোরকে বেইজ্জৎ করিয়া বেত মারা হইবে, যাহার ইচ্ছা হয় দেখিতে আসিতে পারে। শুন নাই?

রাম। কি দুর্বুদ্ধি! তর্কালঙ্কার ঠাকুরই বা কিছু বলেন না কেন? বড় রাণী বা কিছু বলেন না কেন? দুটো গালাগালির ভয়ে কি তাঁরা আর কাছে আসিতে পারেন না?

শ্যাম। তাঁরা না কি অনেক বলেছেন। রাজা বলেন, ভাল, দেবতাই যদি হয়, তবে আপনার রক্ষা আপনিই করিবে, তোমাদের কথা কবার প্রয়োজন কি? আর যদি মানুষ হয়, তবে আমি রাজা, চোরের দণ্ড আমি দিব, তোমাদের কথা কবার প্রয়োজন কি?

রাম। তা এক রকম বলেছে মন্দ নয়—ঠিক কথাই ত। তা ব্যাপারটা কি হয়, কাল দেখতে যেতে হবে। তুমি যাবে?

শ্যাম। যাব বৈ কি! সবাই যাবে। এমন কাণ্ড কে না দেখতে যাবে?