ফুল। তুই চোখের মাথা খেয়েছিস তার কি হবে? ভোরের বেলা তোর সমুখ দিয়ে এসে শুলেম–দেখিস নে?

অলকমণি বলিল, “সে কি, বোন? আমি তোর বেলা দেখে তিন বার বামুনদের বাড়ী গিয়ে তোকে খুঁজে এলাম। তা তোকেও দেখলাম না–কাকেও দেখলাম না। হ্যাঁ লা! প্রফুল্ল আজ কোথা গেছে লা?”

ফু। (শিহরিয়া) চুপ্ কর! দিদি চুপ্! ও কথা মুখে আনিস না।

অ। (সভয়ে) কেন, কি হয়েছে?

ফু। সে কথা বলতো নেই।

অ। কেন লা?

ফু। আমরা ছোট লোক–আমাদের দেবতা বামুনের কথায় কাজ কি, বোন?

অ। সে কি? প্রফুল্ল কি করেছে?

ফু। প্রফুল্ল কি আর আছে?

অ। (পুনশ্চ সভয়ে) সে কি? কি বলিস?

ফু। (অতি অস্ফুটস্বরে) কারও সাক্ষাতে বলিস নে–কাল তার মা এসে তাকে নিয়ে গেছে।

ভগিনী। অ্যাঁ!

অলকমণির গা থর-থর করিয়া কাঁপিতে লাগিল। ফুলমণি তখন এক আষাঢ়ে গল্প ফাঁদিল। ফুলমণি প্রফুল্লের বিছানায় রাত্রি তৃতীয় প্রহরের সময়ে তার মাকে বসিয়া থাকিতে দেখিয়াছিল। ক্ষণপরেই ঘরের ভিতর একটা ভারি ঝড় উঠিল–তার পর আর কেহ কোথাও নাই। ফুলমণি মূর্চ্ছিতা হইয়া, দাঁতকপাটি লাগিয়া পড়িয়া রহিল। ইত্যাদি, ইত্যাদি। ফুলমণি উপন্যাসের উপসংহারকালে দিদিকে বিশেষ করিয়া সাবধান করিয়া দিল, “এ সকল কথা কাহারও সাক্ষাতে বলিস না–দেখিস, আমার মাথা খাস।”

দিদি বলিলেন, “না গো! এ কথা কি বলা যায়?” কিন্তু কথিতা দিদি মহাশয়া তখন চাল ধুইবার ছলে ধুচুনি হাতে পল্লী-পরিভ্রমণে নিষ্ক্রান্ত হইলেন এবং ঘরে ঘরে উপন্যাসটি সালঙ্কার ব্যাখ্যা করিয়া, সকলকে সাবধান করিয়া দিলেন যে, দেখ, এ কথা প্রচার না হয়। কাজেই ইহা শীঘ্র প্রচারিত হইয়া রূপান্তরে প্রফুল্লের শ্বশুরবাড়ী গেল। রূপান্তর কিরূপ? পরে বলিব।