কৃষ্ণকান্তের উইল
পোষ্টবাবু থরথরি কাঁপিতে লাগিলেন–বলিলেন, “আপনি রাগ করেন কেন? আমি ত আপনাকে চিনিতাম না, বাজে লোক মনে করিয়াই ওরূপ বলিয়াছিলাম–আপনি যখন আসিয়াছেন, তখন যাহা জিজ্ঞাসা করিবেন, তাহা বলিব |”
মা। কত দিন অন্তর ব্রহ্মানন্দের চিঠি আসে?
পো। প্রায় মাসে মাসে–ঠিক ঠাওর নাই।
মা। তবে রেজিষ্টরি হইয়াই চিঠি আসে?
পো। হাঁ–প্রায় অনেক চিঠিই রেজিষ্টরি করা।
মা। কোন্ আপিস হইতে রেজিষ্টরি হইয়া আইসে?
পো। মনে নাই।
মা। তোমার আপিসে একখানা করিয়া রসিদ থাকে না?
পোষ্টমাষ্টার রসিদ খুঁজিয়া বাহির করিলেন। একখানা পড়িয়া বলিলেন, “প্রসাদপুর |”
“প্রসাদপুর কোন্ জেলা? তোমাদের লিষ্টি দেখ|” পোষ্টমাষ্টার কাঁপিতে কাঁপিতে ছাপান লিষ্টি দেখিয়া বলিল, “যশোর |”
মা। দেখ, তবে আর কোথা হইতে রেজিষ্টরি চিঠি উহার নামে আসিয়াছে। সব রসিদ দেখ।
পোষ্ট বাবু দেখিলেন, ইদানীন্তন যত পত্র আসিয়াছে, সকলই প্রসাদপুর হইতে। মাধবীনাথ পোষ্ট মাষ্টার বাবুর কম্পমান হস্তে একখানি দশ টাকার নোট দিয়া বিদায় গ্রহণ করিলেন। তখনও হরিদাস বাবাজির হুঁকা জুটিয়া উঠে নাই। মাধবীনাথ হরিদাসের জন্যও একটি টাকা রাখিয়া গেলেন। বলা বাহুল্য যে, পোষ্টবাবু তাহা আত্মসাৎ করিলেন।