ভ্র। তোমার কেন বিশ্বাস হয় না, আমায় বল দেখি?

গো। তা সময়ান্তরে বলিব। তোমার বিশ্বাস হইতেছে না কেন, আগে বল।

ভ্র। তুমি আগে বল।

গোবিন্দলাল হাসিল, “তুমি আগে |”

ভ্র। কেন আগে বলিব?

গো। আমার শুনিতে সাধ হইতেছে।

ভ্র। সত্য বলিব?

গো। সত্য বল।

ভ্রমর বলি বলি করিয়া বলিতে পারিল না। লজ্জাবনতমুখী হইয়া নীরবে রহিল।

গোবিন্দলাল বুঝিলেন। আগেই বুঝিয়াছিলেন। আগেই বুঝিয়াছিলেন বলিয়া এত পীড়াপীড়ি করিয়া জিজ্ঞাসা করিতেছিলেন। রোহিণী যে নিরপরাধিনী, ভ্রমরের তাহা দৃঢ় বিশ্বাস হইয়াছিল। আপনার অস্তিত্বে যত দূর বিশ্বাস, ভ্রমর উহার নির্দোষিতায় তত দূর বিশ্বাসঘাতী। কিন্তু সে বিশ্বাসের অন্য কোনই কারণ ছিল না–কেবল গোবিন্দলাল বলিয়াছেন যে, “সে নির্দোষী, আমার এইরূপ বিশ্বাস |” গোবিন্দলালের বিশ্বাসেই ভ্রমরের বিশ্বাস। গোবিন্দলাল তাহা বুঝিয়াছিলেন। ভ্রমরকে চিনিতেন। তাই সে কালো এত ভালবাসিতেন।

হাসিয়া গোবিন্দলাল বলিলেন, “আমি বলিব, কেন তুমি রোহিণীর দিকে?”

ভ্র। কেন?

গো। সে তোমায় কালো না বলিয়া উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ বলে।

ভ্রমর কোপকুটিল কটাক্ষ করিয়া বলিল, “যাও |”

গোবিন্দলাল বলিলেন, “যাই |” এই বলিয়া গোবিন্দলাল চলিলেন।

ভ্রমর তাঁহার বসন ধরিল–“কোথা যাও?”

গো। কোথা যাই বল দেখি?

ভ্র। এবার বলিব?

গো। বল দেখি?

ভ্র। রোহিণীকে বাঁচাইতে।

“তাই|” বলিয়া গোবিন্দলাল ভোমরার মুখচুম্বন করিলেন। পরদুঃখকাতরের হৃদয় পরদুঃখকাতরে বুঝিল–তাই গোবিন্দলাল ভ্রমরের মুখচুম্বন করিলেন।