কৃষ্ণকান্তের উইল
নং ১–আর শুনেছ কি বৌ ঠাকরুণ?
নং ২–এমন সর্বনেশে কথা কেহ কখনও শুনে নাই।
নং ৩–কি সাহস! মাগীকে ঝাঁটাপেটা করে আস্যবো এখন।
নং ৪–শুধু ঝাঁটা–বৌ ঠাকরুন–বল, আমি তার নাক কেটে নিয়ে আসি।
নং ৫–কার পেটে কি আছে মা–তা কেমন করে জান্,বো মা–
ভ্রমরা হাসিয়া বলিল, “আগে বল না কি হয়েছে, তার পর যার মনে যা থাকে করিস |” তখনই আবার পূর্ববৎ গোলযোগ আরম্ভ হইল।
নং ১ বলিল–শোন নি! পাড়াশুদ্ধ গোলমাল হয়ে গেল যে–
নং ২ বলিল–বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা!
নং ৩–মাগীর ঝাঁটা দিয়ে বিষ ঝাড়িয়া দিই।
নং ৪–কি বলবো বৌ ঠাকরুণ, বামন হয়ে চাঁদে হাত!
নং ৫–ভিজে বেরালকে চিনতে জোগায় না।–গলায় দড়ি! গলায় দড়ি!
ভ্রমর বলিলেন, “তোদের |”
চাকরাণীরা তখন একবাক্যে বলিতে লাগিল, “আমাদের কি দোষ! আমরা কি করলাম! তা জানি গো জানি। যে যেখানে যা করবে, দোষ হবে আমাদের! আমাদের আর উপায় নাই বলিয়া গতর খাটিয়ে খেতে এসেছি|” এই বক্তৃতা সমাপন করিয়া, দুই এক জন চক্ষে অঞ্চল দিয়া কাঁদিতে আরম্ভ করিল। এক জনের মৃত পুত্রের শোক উছলিয়া উঠিল। ভ্রমর কাতর হইলেন–কিন্তু হাসিও সম্বরণ করিতে পারিলেন না। বলিলেন, “তোদের গলায় দড়ি এই জন্য যে, এখনও তোরা বলিতে পারিলি না যে, কথাটা কি। কি হয়েছে?”
তখন আবার চারি দিক হইতে চারি পাঁচ রকমের গলা ছুটিল। বহু কষ্টে, ভ্রমর, সেই অনন্ত বক্তৃতাপরম্পরা হইতে এই ভাবার্থ সঙ্কলন করিলেন যে, গত রাত্রে কর্তা মহাশয়ের শয়নকক্ষে একটা চুরি হইয়াছে। কেহ বলিল, চুরি নহে, ডাকাতি, কেহ বলিল, সিঁদ, কেহ বলিল, না, কেবল চারি পাঁচ চোর আসিয়া লক্ষ টাকার কোম্পানির কাগজ লইয়া গিয়াছে।
ভ্রমর বলিল, “তার পর? কোন মাগীর নাক কাটিতে চাহিতেছিলি?”
নং ১–রোহিণী ঠাকরুণের–আর কার?
নং ২–সেই আবাগীই ত সর্বনাশের গোড়া।
নং ৩–সেই না কি ডাকাতের দল সঙ্গে করিয়া নিয়ে এসেছিল।
নং ৪–যেমন কর্ম তেমনি ফল।
নং ৫–এখন মরুন জেল খেটে।
ভ্রমর জিজ্ঞাসা করিল, “রোহিণী যে চুরি করিতে আসিয়াছিল, তোরা কেমন করে জানলি?”
“কেন, সে যে ধরা পড়েছে। কাছারির গারদে কয়েদ আছে | ”
ভ্রমর যাহা শুনিলেন, তাহা গিয়া গোবিন্দলালকে বলিলেন। গোবিন্দলাল ভাবিয়া ঘাড় নাড়িলেন।
ভ্র। ঘাড় নাড়িলে যে?
গো। আমার বিশ্বাস হইল না যে, রোহিণী চুরি করিতে আসিয়াছিল। তোমার বিশ্বাস হয়?
ভোমরা বলিল, “না |”
গো। কেন তোমার বিশ্বাস হয় না, আমায় বল দেখি? লোকে ত বলিতেছে।