দুর্গেশনন্দিনী
এই বলিয়া দুই চরণের সহিত ওসমানের দুই হস্ত বদ্ধ রাখিয়া, একে একে তাঁহার সকল অস্ত্র শরীর হইতে হরণ করিলেন। তখন তাঁহাকে মুক্ত করিয়া কহিলেন, “এক্ষণে নির্বিঘ্নে গৃহে যাও, তুমি যবন হইয়া রাজপুতের শরীরে পদাঘাত করিয়াছিলে, এই জন্য তোমার এ দশা করিলাম, নচেৎ রাজপুতেরা এত কৃতঘ্ন নহে যে, উপকারীর অঙ্গ স্পর্শ করে |”
ওসমান মুক্ত হইলে আর একটি কথা না কহিয়া অশ্বারোহণ পূর্বক একেবারে দুর্গাভিমুখে দ্রুতগমনে চলিলেন।
রাজপুত্র বস্ত্র দ্বারা প্রাঙ্গণস্থ কূপ হইতে জল আহরণ করিয়া গাত্র ধৌত করিলেন। গাত্র ধৌত করিয়া শালতরু হইতে অশ্ব মোচনপূর্বক আরোহণ করিলেন। অশ্বারোহণ করিয়া দেখেন, অশ্বের বল্গায়, লতা গুল্মাদির দ্বারা একখানি লিপি বাঁধা রহিয়াছে। বল্গা হইতে পত্র মোচন করিয়া দেখিলেন যে, পত্রখানি মনুষ্যের কেশ দ্বারা বন্ধ করা আছে, তাহার উপরিভাগে লেখা আছে যে, “এই পত্র দুই দিবস মধ্যে খুলিবেন না, যদি খুলেন, তবে ইহার উদ্দেশ্য বিফল হইবে।”
রাজপুত্র ক্ষণেক চিন্তা করিয়া লেখকের অভিপ্রায়ানুসারে কার্য করাই স্থির করিলেন। পত্র কবচ মধ্যে রাখিয়া অশ্বে কশাঘাত করিয়া শিবিরাভিমুখে চলিলেন।
রাজপুত্র শিবিরে উপনীত হইবার পরদিন দ্বিতীয় এক লিপি দূতহস্তে পাইলেন। এই লিপি আয়েষার প্রেরিত। কিন্তু তদ্বৃতত্তান্ত পর-পরিচ্ছেদে বক্তব্য।