সপ্তম পরিচ্ছেদ

আমি রজনীকে কলিকাতায় আনিয়া, তাহার কথিত স্থানে অন্বেষণ করিয়া, রাজচন্দ্র দাসের বাড়ী পাইলাম। সেইখানে রজনীকে লইয়া গেলাম।

রাজচন্দ্র কন্যা পাইয়া বিশেষ আনন্দ প্রকাশ করিল। তাহার স্ত্রী অনেক রোদন করিল। উহারা আমার কাছে রজনীর বৃত্তান্ত সবিশেষ শুনিয়া বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিল।
পরে রাজচন্দ্রকে আমি নিভৃতে লইয়া গিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, “তোমার কন্যা গৃহত্যাগ করিয়া গিয়াছিল কেন জান?”

রাজচন্দ্র বলিল, “না। আমি তাহা সর্বদাই ভাবি, কিন্তু কিছুই ঠিকানা করিতে পারি নাই |”

আমি বলিলাম, “রজনী জলে ডুবিয়া মরিতে গিয়াছিল কি দু:খে জান?”

রাজচন্দ্র বিস্মিত হইল। বলিল, “রজনীর এমন কি দু:খ, কিছুই ত ভাবিয়া পাই না। সে অন্ধ, এটি বড় দু:খ বটে, কিন্তু তার জন্য এত দিনের পর ডুবিয়া মরিতে যাইবে কেন? তবে, এত বড় মেয়ে, আজিও তাহার বিবাহ হয় নাই। কিন্তু তাহার জন্যও নয়। তাহার ত সম্বন্ধ করিয়া বিবাহ দিতেছিলাম। বিবাহের আগের রাত্রেই পলাইয়াছিল |”

আমি নূতন কথা পাইলাম। জিজ্ঞাসা করিলাম, “সে পলাইয়াছিল?”

রা। হাঁ।

আমি। তোমাদিগকে না বলিয়া?

রা। কাহাকেও না বলিয়া।

আমি। কাহার সহিত সম্বন্ধ করিয়াছিলে?

রা। গোপাল বাবুর সঙ্গে।

আমি। কে গোপাল বাবু? চাঁপার স্বামী?

রা। আপনি সবই ত জানেন। সেই বটে।

আমি একটু আলো দেখিলাম। তবে চাঁপা সপত্নীযন্ত্রণাভয়ে রজনীকে প্রবঞ্চনা করিয়া ভ্রাতৃসঙ্গে হুগলী পাঠাইয়াছিল। বোধ হয়, তাহারই পরামর্শে হীরালাল উহার বিনাশে উদ্যোগ পাইয়াছিল।
সে কথা কিছু না বলিয়া রাজচন্দ্রকে বলিলাম, “আমি সবই জানি। আমি আরও জানি, তোমায় বলিতেছি। তুমি কিছু লুকাইও না |”

রা। কি-আজ্ঞা করুন।

আমি। রজনী তোমার কন্যা নহে।

রাজচন্দ্র বিস্মিত হইল। বলিল, “সে কি! আমার মেয়ে নয় ত কাহার?”

“হরেকৃষ্ণ দাসের |”

রাজচন্দ্র কিছুক্ষণ নীরব হইয়া রহিল। শেষে বলিল, “আপনি কে, তাহা জানি না। কিন্তু আপনার পায়ে পড়ি, এ কথা রজনীকে বলিবেন না |”

আমি। এখন বলিব না। কিন্তু বলিতে হইবে। আমি যাহা জিজ্ঞাসা করি, তাহার সত্য উত্তর দাও। যখন হরেকৃষ্ণ মরিয়া যায়, তখন রজনীর কিছু অলঙ্কার ছিল?

রাজচন্দ্র ভীত হইল। বলিল, “আমি ত তাহার অলঙ্কারের কথা কিছু জানি না। অলঙ্কার কিছুই পাই নাই |”