রজনী
পঞ্চম পরিচ্ছেদ
পিতা হাসিলেন, বলিলেন, “আমি গরিব-ফুল বেচিয়া খাই-আমার মেয়ে কে বিবাহ করিবে? তাতে আবার কাণা মেয়ে, আবার বয়সও ঢের হয়েছে |”
হী। কেন, পাত্রের অভাব কি? আমায় বলিলে আমি বিয়ে করি। এখন বয়:স্থা মেয়ে ত লোকে চায়। আমি যখন স্তুশ্চুভিশ্চশাৎ পত্রিকার এডিটার ছিলাম, তখন আমি মেয়ে বড় করিয়া বিবাহ দিবার জন্য কত আর্টিকেল লিখেছি-পড়িয়া আকাশের মেঘ ডেকে উঠেছিল। বাল্যবিবাহ! ছি! ছি! মেয়ে ত বড় করিয়াই বিবাহ দিবে। এস! আমাকে দেশের উন্নতির একজাম্পল সেট করিতে দাও-আমিই এ মেয়ে বিয়ে করিব।
আমরা তখন হীরালালের চরিত্রের কথা সবিশেষ শুনি নাই-পশ্চাৎ শুনিয়াছি। পিতা ইতস্তত: করিতে লাগিলেন। এত বড় পণ্ডিত জামাই হাতছাড়া হয় ভাবিয়া শেষ একটু দু:খিত হইলেন; শেষ বলিলেন, “এখন কথা ধার্য হইয়া গিয়াছে-এখন আর নড়চড় হয় না। বিশেষ এ বিবাহের কর্তা শচীন বাবু। তাঁহারাই বিবাহ দিতেছেন। তাঁহারা যাহা করিবেন, তাহাই হইবে। তাঁহারাই গোপাল বাবুর সঙ্গে সম্বন্ধ করিয়াছেন।”
হী। তাঁদের মতলব তুমি কি বুঝিবে? বড়মানুষের চরিত্রের অন্ত পাওয়া ভার। তাঁদের বড় বিশ্বাস করিও না।
এই বলিয়া হীরালাল চুপি চুপি কি বলিল, তাহা শুনিতে পাইলাম না। পিতা বলিলেন, “সে কি? না-আমার কাণা মেয়ে |”
হীরালাল তৎকালে ভগ্নমনোরথ হইয়া ঘরের এ দিক সে দিক দেখিতে লাগিল। চারিদিক দেখিয়া বলিল, “তোমার ঘরে মদ নাই, বটে হে?” পিতা বিস্মিত হইলেন; বলিলেন, “মদ! কিজন্য রাখিব!”
হীরালাল মদ নাই জানিয়া, বিজ্ঞের ন্যায় বলিল, “সাবধান করিয়া দিবার জন্য বলছিলাম। এখন ভদ্রলোকের সঙ্গে কুটুম্বতা করিতে চলিলে, ওগুলা যেন না থাকে |”
কথাটা পিতার বড় ভাল লাগিল না। তিনি চুপ করিয়া রহিলেন। হীরালাল না বিবাহে না মদে, কোন দিকেই দেশের উন্নতির একজাম্পল সেট করিতে না পারিয়া, ক্ষুণ্ণমনে বিদায় হইল।