“বলি ও গোঁসাই!”

উত্তর নাই।

“মর্ বিট্‌লে কি করিতেছ? ও রসিকরাজ রসোপাধ্যায় প্রভু!”

উত্তর নাই।

আশমানি কুটীরের দ্বারের ছিদ্র দিয়া উঁকি মারিয়া দেখিল, ব্রাহ্মণ আহারে বসিয়াছে, এই জন্য কথা নাই, কথা কহিলে ব্রাহ্মণের আহার হয় না। আশমানি ভাবিল, “ইহার আবার নিষ্ঠা; দেখি, দেখি, কথা কহিয়া আবার খায় কি না |”

“বলি ও রসিকরাজ!”

উত্তর নাই।

“ও রসরাজ!”

উত্তর। “হুম্ |”

বামুন ভাত গালে করিয়া উত্তর দিতেছে, ও ত কথা হলো না –এই ভাবিয়া আশমানি কহিল, “ও রসমাণিক!”

উত্তর। “হুম্ |”

আ। বলি কথাই কও না, খেও এর পরে।

উত্তর। “হ-উ-উম্!”

আ। বটে, বামুন হইয়া এই কাজ – আমি স্বামিঠাকুরকে বলে দেব, ঘরের ভিতর কে ও?

ব্রাহ্মণ সশঙ্কচিত্ত শূন্য ঘরের চতুর্দিক নিরীক্ষণ করিতে লাগিল। কেহ নাই দেখিয়া পুনর্বার আহার করিতে লাগিল।

আশমানি কহিল, “ও মাগি যে জেতে চাঁড়াল! আমি যে চিনি!”

দিগ্গিজের মুখ শুকাইল। বলিল, “কে চাঁড়াল? ছুঁয়া পড়েনি ত?”

আশমানি আবার কহিল, “ও, আবার খাও যে? কথা কহিয়া আবার খাও?”

দি। কই, কখন কথা কহিলাম?

আশমানি খিল খিল করিয়া হাসিয়া উঠিল, বলিল, “এই তো কহিলে |”

দি। বটে, বটে, বটে, তবে আর খাওয়া হইল না।

আ। হাঁ ত; উঠে আমায় দ্বার খুলিয়া দাও।

আশমানি ছিদ্র হইতে দেখিতেছিল, ব্রাহ্মণ যর্থাথই অন্নত্যাগ করিয়া উঠে। কহিল, “না, না, ও কয়টি ভাত খাইয়া উঠিও |”

দি। না, আর খাওয়া হইবে না, কথা কহিয়াছি।

আ। সে কি? না খাও ত আমার মাথা খাও।

দি। রাধে মাধব! কথা কহিলে কি আর আহার করিতে আছে?

আ। বটে, তবে আমি চলিলাম; তোমার সঙ্গে আমার অনেক মনের কথা ছিল, কিছুই বলা হইল না। আমি চলিলাম।

দি। না না, আশমান! তুমি রাগ করিও না; আমি এই খাইতেছি।

ব্রাহ্মণ আবার খাইতে লাগিল; দুই তিন গ্রাস আহার করিবামাত্র আশমানি কহিল, “উঠ, হইয়াছে; দ্বার খোল|”

দি। এই কটা ভাত খাই।

আ। এ যে পেট আর ভরে না; উঠ, নহিলে কথা কহিয়া ভাত খাইয়াছ, বলিয়া দিব।

দি। আঃ নাও; এই উঠিলাম।

ব্রাহ্মণ অতি ক্ষুণ্ণমনে অন্নত্যাগ করিয়া, গণ্ডূষ করিয়া উঠিয়া দ্বার খুলিয়া দিল।