বিষবৃক্ষ
শ্রী। তুমি যাও, মানা করি না, কিন্তু তিসির মরসুমটায় আমি কি প্রকারে যাই?
শুনিয়া কমলমণি মুখ ফিরাইয়া মানে বসিলেন। আর কথা কহেন না।
শ্রীশচন্দ্রের কলমে একটু কালি ছিল। শ্রীশ সেই কলম লইয়া পশ্চাৎ হইতে গিয়া কমলের কপালে একটি টিপ কাটিয়া দিলেন।
তখন কমল হাসিয়া বলিলেন, “প্রাণাধিক, আমি তোমায় কত ভালবাসি |” এই বলিয়া, কমল শ্রীশচন্দ্রের স্কন্ধ বাহু দ্বারা বেষ্টন করিয়া, তাঁহার মুখচুম্বন করিলেন, সুতরাং টিপের কালি, সমুদায়টাই শ্রীশের গালে গিয়া লাগিয়া রহিল।
এইরূপে এবারকার যুদ্ধে জয় হইলে পর, কমল বলিলেন, “যদি তুমি একান্তই যাইবে না, তবে আমার যাইবার বন্দোবস্ত করিয়া দাও।”
শ্রী। ফিরিবে কবে?
ক। জিজ্ঞাসা করিতেছ কেন? তুমি যদি গেলে না, তবে আমি কয় দিন থাকিতে পারিব?
শ্রীশচন্দ্র কমলমণিকে গোবিন্দপুরে পাঠাইয়া দিলেন। কিন্তু আমরা নিশ্চিত সংবাদ রাখি যে, সেবার শ্রীশচন্দ্রের সাহেবেরা তিসির কাজে বড় লাভ করিতে পারেন নাই। হৌসের কর্মচারীরা আমাদিগের নিকট গোপনে বলিয়াছ যে, সে শ্রীশ বাবুরই দোষ। তিনি ঐ সময়টা কাজকর্মে বড় মন দেন নাই। কেবল ঘরে বসিয়া কড়ি গুণিতেন। এ কথা শ্রীশচন্দ্র একদিন শুনিয়া বলিলেন, “হবেই ত! আমি তখন লক্ষ্মীছাড়া হইয়াছিলাম |” শ্রোতারা শুনিয়া মুখ ফিরাইয়া বলিল, “ছি! বড় স্ত্রৈণ!” কথাটা শ্রীশের কাণে গেল। তিনি শুনিয়া হৃষ্টমনে ভৃত্যদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, “ওরে, ভাল করিয়া আহারের উদ্যোগ কর। বাবুরা আজ এখানে আহার করিবেন |”