ইন্দিরা
সু। না ত আবার কে? তুমি, তোমার স্বামী শ্বশুরের আর তাঁদের গাঁয়ের নাম বলিয়া দিয়াছিলে, মনে আছে? তাই শুনিয়াই র-বাবু চিনিতে পারিলেন। তোমার উ-বাবুর একটা বড় মোকদ্দমা তাঁর হাতে ছিল—তারই ছল করিয়া তোমার উ-বাবুকে কলিকাতায় আসিতে লিখিলেন। তার পর নিমন্ত্রণ।
আমি। তার পর পাতিয়া বুড়ীর দালটুকু নেওয়া।
সু। হাঁ, সেটাও আমাদের ষড়্য়যন্ত্র।
আমি। তা, আমার পরিচয় কিছু দেওয়া হয়েছে কি?
সু । আ সর্বনাশ! তা কি দেওয়া যায়? তোমাকে ডাকাতে কেড়ে নিয়ে গিয়েছিল, তার পর কোথায় গিয়েছিলে, কি বৃত্তান্ত, তা কে জানে? তোমার পরিচয় পেলে কি ঘরে নেবে? বলবে একটা গছিয়ে দিচ্চে। র-বাবু বলেন, এখন তুমি নিজে যা করিতে পার।
আমি। আমি একবার কপাল ঠুকিয়া দেখিব-না হয় ডুবিয়া মরিব। কিন্তু আমার সঙ্গে দেখা না হইলে, কি করিব?
সু। কখন্ দেখা করবে, কোথায় বা দেখা করবে?
আমি। তোমরা যদি এত করিয়াছ, তবে এ বিষয়েও একটু সাহায্য কর। তাঁর বাসায় গেলে দেখা হইবে না,--কেই বা আমাকে নিয়ে যাবে, কেই বা দেখা করাইবে? এইখানেই দেখা করিতে হইবে।
সু। কখন্?
আমি। রাত্রে, সবাই শুইলে।
আমি। তা বৈ আর গতি কি? দোষই বা কি—স্বামী যে।
সু। না, দোষ নাই। কিন্তু তাহা হইলে তাঁকে রাত্রে আটকাইতে হয়। নিকটে তাঁর বাসা; তা ঘটিবে কি? দেখি একবার র-বাবুর সঙ্গে পরামর্শ করে।
সুভাষিণী রমণ বাবুকে ডাকাইল। তাঁর সঙ্গে কথাবার্তা হইল, তাহা আমাকে আসিয়া বলিল। বলিল, “র”-বাবু যাহা পারেন তাহা এই—তিনি এখন মোকদ্দমার কাগজপত্র দেখিবেন না—একটা ওজর করিয়া রাখিবেন। কাগজ দেখিবার জন্য সন্ধ্যার পর সময় অবধারণ করিবেন। সন্ধ্যার পর তোমার স্বামী আসিলে, কাগজপত্র দেখিবেন। কাগজপত্র দেখিতে দেখিতে একটু রাত্র করিবেন। রাত্র হইলে আহারের জন্য অনুরোধ করিবেন। কিন্তু তার পর তোমার বিদ্যায় যা থাকে তা করিও। রাত্রে থাকিতে আমরা কি বলিয়া অনুরোধ করিব?”
আমি বলিলাম, “সে অনুরোধ তোমাদের করিতে হইবে না। আমিই করিব। আমার অনুরোধে যাহাতে শুনেন, তাহা করিয়া রাখিয়াছি। দুই একটা চাহনি ছুঁড়িয়া মারিয়াছিলাম, তিনি তাহা ফিরাইয়া দিয়াছেন। লোক ভাল নহেন। এখন আমার অনুরোধ তাঁহার কাছে পাঠাই কিপ্রকারে? এক ছত্র লিখিয়া দিব। সেই কাগজটুকু কেহ তাঁর কাছে দিয়ে এলেই হয়।”
সু। কোন চাকরের হাতে পাঠাও না?
আমি। যদি জন্মজন্মান্তরেও স্বামী না পাই, তবুও পুরুষ মানুষকে একথা বলিতে পারি না।
সু। তা বটে। কোন ঝি?
আমি। ঝি বিশ্বাসী কে? একটা গোলমাল বাধাইবে, তখণ সব খোওয়াব।
সু। হারাণী বিশ্বাসী।
আমি। হারাণীকে বলিয়াছিলাম। বিশ্বাসী বলিয়া সে নারাজ। তবে তোমার একটু ইঙ্গিত পাইলে সে যাইতে পারে। কিন্তু তোমায় এমন ইঙ্গিত করিতে কি প্রকারে বলিতে পারি? মরি, ত আমি একাই মরিব।--পোড়া চোখে আবার জল আসিল।
সু। হারাণী আমার কথা কি বলিয়াছে?
আমি। তুমি যদি বারণ না কর, তবে সে যাইতে পারে।
সুভাষিণী অনেক্ষণ ভাবিল। বলিল, “সন্ধ্যার পর তাকে এই কথার জন্য আসিতে বলিও।”