রাজসিংহ
তখন চঞ্চলকুমারীর আজ্ঞামত, যে মহার্ঘ পালঙ্কে তাঁহার জন্য মহার্ঘ শয্যা রচিত হইয়াছিল, তথায় তিনি পরিচারিকাগণের দ্বারা বাহিত ও নীত হইলেন। সেখানে পৌরাঙ্গনাগণ তাঁহার যথাবিহিত শুশ্রূষা করিল। অল্প সময়েই তাঁহার চৈতন্য লাভ হইল। চঞ্চলকুমারী আজ্ঞা দিলেন যে, আর কেহ কোন প্রকারে বেগমের অসম্মান না করে। আহারাদি, শয়ন ও পরিচর্যা সম্বন্ধে চঞ্চলকুমারীর নিজের যেরূপ বন্দোবস্ত, বেগম সম্বন্ধে ততোধিক যাহাতে হয় তাহা করিতে চঞ্চলকুমারী নির্মলকুমারীকে আদেশ করিলেন।
নির্মল বলিল, “তাহা সবই হইবে। কিন্তু তাহাতে ইঁহার পরিতৃপ্তি হইবে না |”
চ। কেন, আর কি চাই?
নি । তাহা রাজপুরীতে অপ্রাপ্য।
চ। শরাব? যখন তাহা চাহিবে, তখন একটু গোময় দিও।
উদিপুরী পরিচর্যায় সন্তুষ্ট হইলেন। কিন্তু রাত্রিকালে উপযুক্ত সময় উপস্থিত হইলে উদিপুরী নির্মলকুমারীকে ডাকাইয়া মিনতি করিয়া বলিলেন, “ইমলি বেগম–থোড়া শরাব হুকুম কি জিয়ে |”
নির্মল “দিতেছি” বলিয়া রাজবৈদ্যকে গোপনে সংবাদ পাঠাইলেন। রাজবৈদ্য এক বিন্দু ঔষধ পাঠাইয়া দিলেন, এবং উপদেশ দিলেন যে, শরবৎ প্রস্তুত করিয়া ঔষধবিন্দু তাহাতে মিশাইয়া শরাব বলিয়া পান করিত দিবে। নির্মল তাহাই করাইলেন। উদিপুরী তাহা পান করিয়া, অতিশয় প্রীত হইলেন। বলিলেন, “অতি উৎকৃষ্ট মদ্য |” এবং অল্পকাল মধ্যেই নেশায় অভিভূত হইয়া গভীর নিদ্রায় মগ্ন হইলেন।